হিজুলিবাসী লক্ষ্মীপুজোতেই
কেনেন নতুন জামা-কাপড়
চাষাবাদের জন্য ভরসা নদীর জল। সারা বছর বেহুলা নদীর জলেই সবুজ থাকে গ্রামের খেত। কিন্তু নদী উপচে গেলেই বিপাক। মাঠ-ঘাট ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হয় খেতের ফসল। প্রায় দু’দশক আগে কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হিজুলি গ্রামের বাসিন্দাদের মনে করেন, দেবীর লক্ষ্মীর কৃপা না পাওয়াই এমন ক্ষতির কারণ। তাই ১৮ বছর আগে এলাকাবাসী শুরু করেন দেবীর আরাধনা। সময় যত এগিয়েছে, বেড়েছে পুজোর জৌলুস।
মাটির মডেলে পণপ্রথার চিত্রণ। হিজুলির একটি মণ্ডপে কেদারনাথ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
গ্রামে প্রায় হাজার ছয়েক মানুষের বাস। পেশায় অধিকাংশই প্রান্তিক চাষি বা খেতমজুর। লক্ষ্মীপুজো এখানকার সবথেকে বড় উৎসব। গ্রামের মানুষ এই পুজোতেই কেনেন নতুন জামাকাপড়। সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তিন দিনের উৎসব শুরু হল মঙ্গলবার রাত থেকে।
গ্রামে ঢোকার মুখেই পশ্চিমপাড়া। সেখানেই অঙ্কুর ক্লাবের মণ্ডপ। পুকুর পাড়ে মণ্ডপ এবং মডেল তৈরির কাজ করেছেন ক্লাব সদস্যেরা। মণ্ডপ সজ্জার ভাবনাও তাদের নিজেদের। এ বার এই ক্লাবের থিম ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে প্লাইউড ও মাটির বেশ কিছু মডেল। প্লাইউডের মডেলে জোর দেওয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপরে। মাটির মডেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পণপ্রথাকে। সেখানে দেখানো হয়েছে পণের টাকা না পাওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার করা হচ্ছে এক বধূর উপরে। মণ্ডপ সজ্জার কাজে ব্যস্ত পল্লব হাজরা, বিমল মাঝি, নির্মল মাঝিদের দাবি, “মঙ্গলবার রাতে পুজো শুরুর আগেই দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে মণ্ডপের দরজা।” মণ্ডপের গা ঘেঁষে চওড়া পিচের রাস্তা। উৎসবের দিনগুলিতে ভিড় উপচে পড়ার আশায় পসরা সাজিয়ে রাস্তার দু’পাশে বসেছে অস্থায়ী দোকান।
এখান থেকে কয়েক পা এগোলেই দক্ষিণপাড়া। লক্ষ্মীপুজোয় সেজে উঠেছে এই পাড়াও। ছোট ছোট অলিগলিতে পোঁতা হয়েছে কলাগাছ। উৎসব উপলক্ষে এ গাছের নানা অংশে পেঁচিয়ে লাগানো হবে রঙিন আলো। খুঁটিতে খুঁটিতে আলোয় থাকছে হরেক থিম। কোথাও ফুটে উঠবে সাত রঙের আলো। কোথাও আবার নদীর জলে খেলা করবে অষ্টাদশী তরুণী। পাড়ার মাঝামাঝি জায়গায় তৈরি হয়েছে পুজো মণ্ডপ। উৎসবের দিনগুলিতে মণ্ডপ লাগোয়া মাঠে থাকবে জীবন্ত মডেলের প্রদর্শনী। মডেল সাজবেন পাড়ার বাসিন্দারাই। জীবন্ত মডেলে থাকবে মুম্বই বিস্ফোরণ, সতীদাহ প্রথা-সহ নানা দৃশ্য। দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত মালিকের কথায়, “উৎসবের সমস্ত খরচ উঠে আসে গ্রামবাসীদের চাঁদা থেকে।”
আলোয় সেজেছে গ্রাম। নিজস্ব চিত্র।
জীবন্ত মডেল দেখতে কেলনই, রাহাতপুর, হাটগাছা, পাণ্ডুয়া, বেগুনিয়া গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ এই গ্রামে আসেন। এই গ্রামের মাঝের পাড়াতেও উৎসব উপলক্ষে রয়েছে উন্মাদনা। দিন কয়েক আগে থেকেই আত্মীয়-স্বজনদের ভিড় জমতে শুরু করেছে গ্রামের বাড়ি বাড়ি।
উৎসবে প্রতিমা, মণ্ডপ-সহ নানা উপকরণ নিয়ে তিনটি পাড়ার মধ্যে রেষারেষি থাকলেও মিল রয়েছে কেবল এক জায়গাতেই। দেবীর কাছে সকলেরই কাতর আর্তি, ‘সারা বছর সন্তানেরা যেন থাকে দুধে-ভাতে।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.