যেমন ফুলকপির দাম, তেমনই নারকেলের। মধ্যবিত্তের পক্ষে ছোঁয়াই দায়। কিন্তু যাদের বাড়িতে পুজো প্রায় পৌনে এক শতকের পুরনো, তাঁদের কি আর পিছোলে চলে?
আসানসোলের ঘাঁটিগলিতে ঘাঁটি পরিবারের পুজো তাই ফি বছরের মতো একই রকম ধুমধামের সঙ্গে পালিত হল। পুজোর বয়স ৭৪ বছর। উৎপত্তির দিক দিয়ে ধরলে পারিবারিক পুজো, কিন্তু কবেই তা সর্বজনীনের রূপ পেয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা প্রবল উৎসাহে পুজোয় যোগ দেন। পরিবারের প্রবীণ সদস্য হরিসাধন ঘাঁটি জানান, পারিবারিক এই পুজোর আনন্দ তাঁরা ভাগ করে নেন সকলের সঙ্গে। ফলে ঘাঁটিদের সঙ্গে এই পুজো পাড়ার মানুষেরও পুজো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির চাপে মলিন হয়নি কুলটির বেনাগ্রামে এক রাতের লক্ষ্মীপুজোও। অনুন্নয়নের জেরে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া বাসিন্দারা এই একটি দিনে নিজের নিজের ভিটেতে ফিরে আসেন। প্রায় ২৫টি পরিবার যৌথ ভাবে গ্রামে ঢোকার মুখে এক মাত্র লক্ষ্মী মন্দিরে ধনদেবীর পুজোর আয়োজন করেন। সকাল থেকেই পুজোর জোগাড় শুরু হয়। কিন্তু গ্রামে আজও বিদ্যুৎ আসেনি। তাই সন্ধ্যা নামতেই জেনারেটর চালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে কোজাগরী পুজো হয়। রাতেই উৎসব শেষ করে বাসিন্দারা যে যার বাড়ি ফিরে যান। এ বারও তার ব্যত্যয় হয়নি। |
শুধু এ রকম ঐতিহ্যবাহী পুজোই নয়। আসানসোল শহর জুড়েই পুজো হয়েছে যথেষ্ট জাঁকজমক করেই। যদিও রানিগঞ্জ-জামুড়িয়া কয়লাঞ্চলে এ বার সব পুজো-পার্বণেরই জাঁক কিছুটা স্তিমিত। যার মূল কারণ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে কয়লার চোরাকারবার অনেকখানি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং তার জেরে কাঁচা পয়সার জোগান কমে যাওয়া। এই যেখানে পরিস্থিতি, সেখানে ধনদেবীর আরাধনা জমবে কী করে? কিন্তু যে সব এলাকার সঙ্গে কয়লা কারবারের কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই, সেখানে পুজো স্বাভাবিক ছন্দেই হয়েছে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন বাজারে শেষ মুহূর্তের পুজোর কেনাকাটা চলেছে। দাম চড়া হলেও আয়োজনে খামতি রাখতে চাননি কেউ। যাঁরা সোমবার রাত পর্যন্ত প্রতিমা কেনেননি, তাঁরা সকালেই প্রতিমা নিয়ে গিয়েছেন। পসরা নিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রং ও আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমার দামও সামান্য বাড়াতে হয়েছে। তবে বাস্তবতা বুঝে ক্রেতারা বিশেষ দরাদরি করেননি। পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্যের সঙ্গে জমকে পাল্লা দিয়েছে সর্বজনীন পুজোগুলি। আসানসোল শহরের বিভিন্ন এলাকায় সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোতেও প্রায় দুর্গাপুজোর ঢঙেই মণ্ডপ ও আলোকসজ্জায় জোর দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সন্ধ্যায় বিভিন্ন মণ্ডপে দর্শনার্থীরা ভিড়ও করেছেন যথারীতি।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প ও পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব এই মুহূর্তে ভবিষ্যতের গর্ভে। সে সব হবে কি না, পরের বছর লক্ষ্মীপুজো কেমন কাটবে, তা সময়ই বলবে। |