হবেবাবুর গল্প
বে’বাবুকে নিয়ে আর পারা যায় না। ‘হবে’বাবু খুব আশাবাদী মানুষ। যে কোনও বিষয়েই তাঁর বিশ্বাস, যত বাধা বিপত্তি আসুক না জীবনে, সব কিছুকে অতিক্রম করা যায়। জীবনের কোনও বাধাই বাধা নয়। চরৈবেতি, চরৈবেতি, এগিয়ে চলো এগিয়ে চলো।
হবেবাবুর আশাবাদের প্রভাবে বাড়ির সব লোক ব্যতিব্যাস্ত এবং বিভ্রান্ত। হবেবাবুর ছেলে টুকাই এ বার ক্লাস ফাইভে উঠল। টুকাই এমনিতে শান্তশিষ্ট লেখাপড়ায় খারাপ নয়, খেলাধুলো করার চেয়ে কার্টুন দেখতে ভালবাসে। ইদানীং ওর জীবনের প্রধান সমস্যা ওর বাবা হবেবাবু। হবেবাবুর বিশ্বাস টুকাই ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি, ওর মধ্যে চাপা পড়ে আছে সব দুর্লভ প্রতিভা। তাকে খুঁজে বের করতে হবে। সেই খুঁজে বের করার কাজটায় তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন।
টুকাই ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে মাকে বলল, ‘জানো মা, আমি না স্বপ্নে কাল লুসিফারের সঙ্গে যুদ্ধ করলাম।’ ব্যস, হবেবাবু পেয়ে গেলেন প্রতিভার পরিচয়।
সঙ্গে সঙ্গে খাতা-কলম, রং-তুলি দিয়ে বসিয়ে দিলেন টুকাইকে; টুকাই অবাক সকালবেলা ইউনিট টেস্টের পড়া করে খামোখা রং-তুলি কেন? ‘ওরে ছেলে, বুঝতে পারছিস না, তোর স্বপ্নে কি অসম্ভব সম্ভাবনা। তুই স্বপ্নটা এঁকে ফেল বাবা। ওই যে লুসিফার ও হল জীবনের সমস্ত নেতিবাচকতার প্রতীক। ও জীবনের সমস্ত বাধাকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুই ওকে মেরে ফেলতে পারলে বিজয়ের শিরোপা পাবি রে বাবা!’
বক্তৃতার মাঝপথে টুকাইয়ের মা ঝঙ্কার দিয়ে বাজারের থলিটা হবেবাবুর হাতে ধরিয়ে দেন সকালবেলা ‘নেতিবাচকতা’ রেখে, দু’টি বাঁচা মাছ বেছেবুছে আনো তো বাপু।’ আর ওই বাঁচা মাছই হবেবাবুর সামনে দ্বিতীয় সঙ্কট এনে দিল।
ছবি: শান্তনু চক্রবর্তী
হবেবাবু ব্যাগ দিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে মাছের বাজারে গেলেন। বাঁচা মাছ ঠিক কোন শ্রেণির মাছ, তিনি জানেন না। টুকাইয়ের মা বাঙাল বাড়ির মেয়ে, নানা ধরনের মাছ চেনেন ও খেতে ভালবাসেন। স্বপ্ননীল চোখে টুকাইয়ের মায়ের হাসিখুশি মুখটি ভাবতে ভাবতে একটি মাছওলার সামনে দাঁড়ালেন হবেবাবু! মাছওলা হবেবাবুকে চেনেন। বড় বড় সরপুঁটিগুলি বাঁচা মাছ বলে হবেবাবুর ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ‘পঁচাত্তর টাকা আট আনা দেন বাবু।’
‘বাঃ তোমার তো ম্যাথামেটিকাল আই কিউ খুব ভাল। কী তাড়াতাড়ি সাড়ে তিনশো মাছের দামটা হিসাব করলে। না, না তোমার মাছ বিক্রি করা ঠিক হচ্ছে না। তোমার এমন অঙ্কের প্রতিভা, তুমি তো অঙ্কের শিক্ষক হতে পারতে!’
হবেবাবুর বক্তৃতার মাঝখানে দু’টি কথা বিস্ফোরক হয়ে গেল। মাছওয়ালার বউ পাশে বসে মাছ কুটছিল। ঘ্যানঘেনে গলায় বলে উঠল, ‘কী অলপ্পেয়ে লোক গো তুমি, মাছ বেচা ঠিক হচে না, ম্যাস্টার হলে ভাল হত! কেনে মাছ বেচা কি খারাপ কাজ? খবদ্দার, আমাদের জাতবেবসা নিয়ে খোঁটা দিবে না, বুলছি।’
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হবেবাবুকে ঘিরে ধরল কয়েক জন। তাদের লিডার পল্টে মাস্তান। ‘ভাইসব, এ সব চক্রান্তে কান দেবেন না, এই সব মানুষেরা আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দেয়। এর ভিতরে আছে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। যাকে বলে, কী বলে আত্মসম্মান, তাই নিয়ে টানাটানি।
বিষয়টি এখানেই শেষ হল না। বিকেলবেলা শিক্ষক সমিতির চিঠি এল হবেবাবুর বাড়িতে। সমস্ত অঙ্কের শিক্ষকরা অপমানিত হয়ে হবেবাবুর বিরুদ্ধে সভা করছেন।
হবেবাবু চিঠিটি হাতে নিয়ে হাসি হাসি মুখে বললেন, ‘দেখলে কেমন সুন্দর একটি সামাজিক আলোড়ন তৈরি হল। এ ভাবেই সমাজের গতিপথ বদলায়।’
হবেবাবু অনেক দিন চাকরি করলেও প্রমোশন হয় না। তাঁর প্রমোশনের চিঠি উঁচু দফতরের কেরানির ফাইলে পড়ে থাকে। আশাবাদী হবেবাবু এক দিন এক দিন সুদিন আসবে ভাবতে ভাবতে অবসর নেন। অবসরের পরে ঠিকঠাক পেনশন না পেলেও হবেবাবুর দিন কাটে। তার পর এক দিন আকাশের তারা হয়ে যান হবেবাবু।
টুকাই এখন বড় হয়েছে। সাদামাটা চাকরি করে। সারা দিন নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করে। যে দিন খুব মনখারাপ করে রাত্তিরের আকাশের দিকে তাকায়। দেখে, আকাশ থেকে হবেবাবু ওর দিকে চেয়ে বলছেন, ‘মন খারাপ কোরো না, দুষ্টু লোকগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে স্বপ্ন আঁকতে হয়। এঁকে ফেলো তো কালকের স্বপ্নটা!’ ব্যস টুকাইয়ের মনখারাপ ভাল হয়ে যায়!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.