কোথাও আতসবাজির প্রদর্শনী, কোথাও বা নৌকা বাইচ। শারদোৎসবের বিসর্জন পর্বও উত্তরবঙ্গে শেষ হল অত্যন্ত জমকালো ভাবে।
দু’ দিন ধরে বিসর্জন চলে কোচবিহারে। বৃহস্পতিবার কোচবিহার সদর, তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মহকুমায় বিসর্জন পর্ব চলে। দিনহাটার সব পুজো কমিটি বৃহস্পতিবার বিসর্জনে সামিল হলেও কোচবিহার সদর এবং তুফানগঞ্জ মহকুমার বহু পুজোর বিসর্জন হয় শুক্রবার। মাথাভাঙা এবং মেখলিগঞ্জে বিসর্জন হয়েছে এ দিন। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “জেলার সর্বত্র বিসর্জন পর্ব নির্বিঘ্নেই মিটেছে।” নিরঞ্জন উপলক্ষ্যে এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির বিপ্লবী সঙ্ঘ যমুনা নদীর পাড়ে আতসবাজির প্রদর্শনী করে। রাত পর্যন্ত নদীর বুকে জল চড়কি, তুবড়ি, ফুলঝুরির মতো আতসবাজি পোড়ান হয়। ‘রাবণ বধ’-এর ওই প্রদর্শনী দেখতে ওপারের বাংলাদেশের অনেক বাসিন্দা সামিল হন। গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা নদীর ঘাটে দশমীর মেলা এবং বিসর্জনে মাতেন বাসিন্দারা। |
কোচবিহার সদরে তোর্সা নদীর নিত্যানন্দ আশ্রম ঘাটে, তুফানগঞ্জে রায়ডাক নদীর ঘাটে, দিনহাটার থানা দিঘিতে, মাথাভাঙার সুটুঙ্গা নদীতে মেখলিগঞ্জের তিস্তা ঘাটে চ্যাংরাবান্ধ্যার ধরলা নদীর পাড়ে বিসর্জন দেন অধিকাংশ পুজোর উদ্যোক্তারা। বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জে পাড়ার পুজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাঁটেন সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস। এ দিন মাথাভাঙায় বিসর্জনের তদারকি করতে দেখা গিয়েছে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনকে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা জুড়ে তিনশোর বেশি দুর্গা পুজো হয়। সকলেই যাতে সুষ্ঠু ভাবে প্রতিমা বিসর্জন দিতে পারে সে জন্য ঘাটে আলোর ব্যবস্থা, ভিড় সামলাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “শুক্রবার রাতের মধ্যেই সব প্রতিমা বিসর্জন হয়ে যাওয়ার কথা। অপ্রীতিকর কোনও ঘটনার খবর নেই।”
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রায়গঞ্জের খরমুজা ঘাট এবং বন্দর ঘাটের কুলিক নদীতে নির্বিঘ্নেই শেষ হল প্রতিমা বিসর্জন। বাড়ি এবং বিভিন্ন ক্লাবের পুজো মিলিয়ে বৃহস্পতিবার ৯৬ টি এবং শুক্রবার ১২ টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। দু’টি ঘাটেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। রায়গঞ্জ পুরসভার তরফেও নদীর ঘাটগুলিতে কর্মী নিয়োগ করা হয়। তারা প্রতিমা বিসর্জনের সময় সাহায্য করেছেন। বিসর্জনে অংশ নেওয়া বাসিন্দাদের নদীতে নামতে দেওয়া হয়নি। উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতিমা নিয়ে পুর কর্মীরাই বিসর্জনের কাজ সারেন। দূষণ ঠেকাতে প্রতিমার ফুল বেলপাতা নদীতে ফেলতে দেওয়া হয়নি। নদীর ধারে সেগুলি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুর কর্মীরা প্রতিমার কাঠামোগুলি জল থেকে তুলে সেগুলি নিতে উৎসাহী স্থানীয় গরিব বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেন। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস বলেন, “শনিবারের মধ্যেই সমস্ত কাঠামো নদী থেকে তুলে নেওয়া হবে। গরিব বাসিন্দারা অনেকে বাড়ি সংস্কারের কাজে কাঠামোর বাঁশ, কাঠ ব্যবহার করেন বলে সেগুলি তাদের দেওয়া হচ্ছে।” |