গাড়িতে মন্ত্রী নেই। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও জ্বলছিল লালবাতি। গাড়িতে ছিল ‘অপরিচিত’ কিছু লোকও। বৃহস্পতিবার, দশমীর রাতে মালদহের ইংরেজবাজার থানার দুর্গাবাড়ি মোড়ের কাছে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জন্য প্রশাসনের ভাড়া নেওয়া ওই গাড়ির ধাক্কায় এক দম্পতি জখম হওয়ার পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। দুর্ঘটনার পরে চালক গাড়ি নিয়ে পালানোর সময়ে জনতা তাতে ঢিল মেরে ভাঙচুর করে বলেও অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।
ঘটনার নিন্দা করেছেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রীদেবী। তাঁর কথায়, “যা ঘটেছে, অত্যন্ত দুঃখজনক। সে সময়ে গাড়ি কে চালাচ্ছিল, জানি না। তবে যে চালক ওই দম্পতিকে ধাক্কা মেরেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি জেলাশাসককে।” শুক্রবার রাতে মালদহ সদর হাসপাতালে আহত দম্পতিকে দেখতে যান তিনি। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “পুলিশ সুপারের কাছে দুর্ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছি।”
যদিও দুর্ঘটনার পরে পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, মন্ত্রী গাড়িতে না থাকলেও লালবাতি জ্বালানো এবং দম্পতিকে ধাক্কা দিয়ে জখম করার মতো ‘অপরাধ’ করা সত্ত্বেও কেন ওই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেনি পুলিশ? প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বেশি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের ওই দুর্ঘটনায় জখম হন স্থানীয় একটি ক্লাবের পুজো কমিটির সম্পাদক মনোজিৎ কর্মকার ও তাঁর স্ত্রী অনিতাদেবী। পেশায় ইলেকট্রিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী, মহেশমাটি এলাকার বাসিন্দা মনোজিৎবাবু মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের প্রতিমা দর্শনে বেরিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দুর্গাবাড়ি মোড়ের কাছে রাস্তার বাঁ দিকে মোটরবাইক থামিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওই দম্পতি। সেই সময়ে লালবাতি লাগানো ওই গাড়ি তাঁদের ধাক্কা মারে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রী সাবিত্রীদেবীকে রাত ৮টা নাগাদ শহরের সদরঘাটের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন ভাড়াগাড়ির চালক। তার পরে গাড়ি নিয়ে তিনি চলে যান।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই গাড়ির মালিক মালদহ শহরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সিংহ। এ দিন প্রসেনজিৎবাবু জানান, দশমীর দিন জেলাশাসকের দফতর থেকে তাঁর গাড়িটি সকাল ৮টা থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পরে ওই গাড়িতে চেপেই শহরের পুজো দেখতে বেরিয়েছিলেন প্রসেনজিৎবাবুর পরিবারের লোকেরা। প্রসেনজিৎবাবুর দাবি, “সে সময় গাড়ির লালবাতি জ্বালানো ছিল না।” গাড়ির চালক সানি সিংহের মোবাইল নম্বরও দেন তিনি। তবে এ দিন বহু চেষ্টা করেও ওই নম্বরে যোগাযোগ করা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজিৎবাবুর কোমরে মারাত্মক চোট লেগেছে। অনিতাদেবীর মাথায় ৮টি সেলাই পড়েছে। যে ক্লাবের সঙ্গে মনোজিৎ জড়িত, তার সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা এবং অন্য সদস্যদের বক্তব্য, “গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে।” দুর্ঘটনার জেরে এ দিন প্রতিমা বিসর্জনে কোনও রকম আড়ম্বর করেননি ওই ক্লাবের সদস্যেরা। |