দুষ্কৃতীদের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে মৃত্যু ছাত্রের
মাদ্রাসার হস্টেল থেকে বেরিয়েছিল বন্ধুর জন্য ওষুধ আনতে। ফেরার পথে দু’দল সমাজবিরোধীর লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র। বৃহস্পতিবার, দশমীর সন্ধ্যায় ওই দুষ্কৃতী-সংঘর্ষে তেতে ওঠে মালদহের কালিয়াচক থানার বাখরপুর। সংঘর্ষের জেরে প্রায় এক ঘণ্টা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, নিহত ছাত্রের নাম মাসুদ শেখ (১২)। বাখরপুরে বাড়ি হলেও মাসুদ স্থানীয় সুফিয়া কাঞ্জুলুলুম খারিজি মাদ্রাসার হস্টেলে থাকত। দুষ্কৃতীদের বোমা, গুলির আঘাতে এক মহিলা-সহ ৫ জন জখম হন। আনিকুল শেখ নামে এক সমাজবিরোধীও জখম হয়ে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর সংঘর্ষে নিরপরাধ ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রটিকে খুনের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে। ফের যাতে সমাজবিরোধীরা হামলা চালাতে না পারে, সে জন্য ওই এলাকায় পুলিশ-পিকেট বসানো হয়েছে।”
মাসুম শেখের দেহ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুষ্কৃতী দলের এক পাণ্ডাকে বাখরপুর এলাকায় দেখতে পেয়ে প্রাণে মারার জন্য এলোপাথাড়ি বোমা, গুলি ছুড়তে থাকে তার বিপক্ষ গোষ্ঠীর লোকেরা। নিমেষের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাখরপুর। দু’পক্ষই আক্রমণ শানায়। বাখরপুর বাজার থেকে ওষুধ কিনে সেই সময় হস্টেলে ফিরছিল মাসুদ। মাঝ রাস্তায় সে গোলমালের মধ্যে পড়ে। বোমা, গুলি থেকে বাঁচতে দৌড় মেরেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি ওই বালক। সমাজবিরোধীদের গুলি লাগে তার মাথার পিছনে। গুলিবিদ্ধ মাসুদকে লুটিয়ে পড়তে দেখে এলাকাবাসী ছুটে গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়।
শুক্রবার দুপুরে বাখরপুরে গিয়ে দেখা গেল, গোটা গ্রামে শোকের ছায়া। সমাজবিরোধীদের হাত থেকে এলাকা ‘মুক্ত’ করার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ফুঁসছেন। নিহতের বাবা কলমিস্ত্রি সায়েদ শেখ বললেন, “মাসুদ আমার বড় ছেলে। বাড়িতে রেখে পড়াশুনা করানোর খরচ জোগাড় করতে পারব না বলেই বিনে পয়সায় মাদ্রাসার হস্টেলে রেখে ছেলেকে পড়াচ্ছিলাম। বন্ধুর জন্য ওষুধ আনতে হস্টেল থেকে যদি না বেরোত, তা হলে ওকে এ ভাবে বেঘোরে মরতে হত না।” মাসুদের সহপাঠী জিয়াউল বলল, “আমার মাথা ধরেছিল বলে ওষুধ আনতে গিয়েছিল মাসুদ। ও যদি না যেত, তা হলে এমন হত না!”
পুজোর কয়েকদিন ছুটি কাটাতে বাখরপুরে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন জালালপুরের আজিজুল শেখ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তিনটি গুলি লাগে তাঁর পায়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সমাজবিরোধীদের ছোড়া বোমার ঘায়ে জখম হয়েছেন বাখরপুরের আঞ্জুমাবিবি ও তাঁর কিশোরী মেয়ে এবং অন্য দুই স্থানীয় বাসিন্দা সামিম শেখ, কৌসর শেখ। আঞ্জুমাবিবি বলেন, “মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়েছে, গুলি চলেছে। সন্ধ্যাবেলা মেয়েকে নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিছু বোঝার আগেই একটা বোমা বাড়ির সামনে ফাটে। আমরা ছিটকে পড়ি। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুজাপুর হাসপাতাল মোড় এলাকা দখলে রাখা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে নিয়মিত ওই অঞ্চলে সমাজবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সব জেনেও পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’। স্কুল-ছাত্র মাসুদ সেই ‘নিষ্ক্রিয়তা’রই মাসুল দিল জীবন দিয়ে। পুলিশ সুপার অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয় নয়। নিয়মিত ধরপাকড় করা হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.