নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
পরিষেবা বহাল রাখতে ময়নাগুড়ি বাস ডিপো তুলে দেওয়ার কথা এই মূহুর্তে ভাবছেন না উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁরা সাফ জানিয়েছেন কয়েক মাসের মধ্যে লোকসান নিয়ন্ত্রণে না-এলে ডিপোর কর্মী ও বাসের সংখ্যা কমানো হবে। নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা কোনও ডিপো তুলতে চাই না। ময়নাগুড়ি ডিপো থাকবে। ওই ডিপোকে লাভজনক করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেটা না-হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়ে বাস ও কর্মী সংখ্যা কমাতে হবে।” মাসে দশ লক্ষ টাকা লোকসানের কারণে ময়নাগুড়ি ডিপো তুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ— সম্প্রতি ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের হুমকি দেয় কংগ্রেস, আরএসপি এবং সিপিএম। সর্বদলীয় কমিটি গড়ে আন্দোলনের চিন্তাভাবনাও শুরু হয়। জনমত তৈরি করতে পুজোয় প্রচারে নামে নাগরিক কমিটি। ব্যবসায়ী সমিতি-সহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে কেন নিগম কর্তারা লাভজনক রুটে বাস চালাতে উদ্যোগী না-হয়ে লোকসানের অজুহাতে কেন জেলার পুরানো বাস ডিপো তুলে দেওয়া হবে! স্থানীয় বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “একদিকে রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্প বিকাশের কথা বলছেন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তারা ময়নাগুড়ি ডিপো তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ওঁরা আসলে কী করতে চাইছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। বিধানসভায় ওই বিষয়ে জানতে চাইব।” উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের পরিবহণ পরিষেবা দেওয়ার জন্য ১৯৫১ সাল নাগাদ নতুন বাজার এলাকায় বাস ডিপোটি গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘদিন বিভিন্ন রুটে ঠিকঠাক বাস চলেছে। লোকসানের সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত এক দশক থেকে ডিপোর পরিষেবা বেহাল হতে শুরু করে। বাসের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৪টিতে। গ্রাম ও শহরের অনেক লাভজনক রুটে বাস চালানো বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দূরপাল্লার রুট বলতে রয়েছে কলকাতা, ফরাক্কা, মালদহ। কল্যাণীর মতো কয়েকটি রুট বন্ধ। এক সময় রিজার্ভে বাস পাঠিয়ে ভাল রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন ডিপো কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেটাও বন্ধ হয়েছে। ঝরঝরে বাসে যাত্রী সংখ্যাও কমেছে। নিগম কর্তারা জানান, বর্তমানে প্রতি মাসে ডিপোটি ১০ লক্ষ টাকা লোকসানে চলছে। ভর্তুকি দিয়ে বেশিদিন সেটা চালানো সম্ভব হবে না। কেন বাস ডিপোটি লোকসানে চলছে? নিগম কর্তারা খোলসা করেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ময়নাগুড়ি ডিপোকে লাভজনক করার কোনও পরিকল্পনা গত এক দশকে নেওয়া হয়নি। ময়নাগুড়ি-শিলিগুড়ির মতো লাভজনক রুটে বাস না-বাড়িয়ে পুরনো নিয়মে সব চলছে। অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ সহ ব্যবসার কাজে জড়িত প্রচুর যাত্রী প্রতিদিন শিলিগুড়িতে যাতায়াত করে। এ ছাড়াও রয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে থাকা রোগীর বাড়ির লোকজন। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত গন্তব্যে পৌছতে ওই যাত্রীদের ভরসা বেসরকারি বাস। প্রশ্ন উঠেছে কেন সকাল-বিকেলে ময়নাগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটে একাধিক বাস চালানো হবে না! ময়নাগুড়ি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষাল বলেন, “ডিপোকে লাভজনক করার জন্য নিগম কর্তৃপক্ষকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির মতো রুটগুলিতে বেশি বাস চালাতে হবে। প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা না-করে ডিপো বন্ধ করা হলে আন্দোলনে নামব।” |