|
|
|
|
লক্ষ্মীমন্ত |
আমার বায়োডেটাটা লক্ষ্মী মেয়ের মতোই |
শান্তা ঘোষ
কর্ণধার, ডিসিপিএল |
ছোটবেলায় মেয়ে বলে কোনও বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়নি। তাই পড়াশোনার জগতে থাকার সময় বিপ্লব ঘটানোরও কারণ ঘটেনি। সে ক্ষেত্রে আমার বায়োডেটাটা তাই বেশ লক্ষ্মী মেয়ের মতোই। লোরেটো হাউজের কড়া বিধি নিষেধ মানা স্কুলজীবন। যেখানে নেই দিনের শেষে আচার বা ফুচকার হাতছানি। তার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আর্কিটেকচার’ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। এবং নিয়ম মেনেই আমেরিকায় পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা। এ পর্যন্ত লক্ষ্মী মেয়ে হওয়া আটকায়নি।
’৮৯ সালে দেশে ফিরে এসে বাবার সংস্থা ডিসিপিএল-এ যোগ দেওয়ার মধ্যেও কোনও লড়াই ছিল না। আসল যুদ্ধ শুরু ২০০২ সাল থেকে। বাবার ছত্রছায়ায় ব্যবসা করায় তেমন কোনও চ্যালেঞ্জ ছিল না। কিন্তু নিজেই যখন হাল ধরলাম, গোল বাঁধল তখনই। সেই চিরাচরিত ‘হোম ফ্রন্ট’ বনাম ‘ওয়ার্ক ফ্রন্ট’-এর ঠোকাঠুকি। কিন্তু সেটা সামলাতেও বিশেষ সমস্যা হয়নি। যত না সমস্যা হয়েছে ‘বয়েজ ক্লাব’-এ গুঁতিয়ে ঢোকা। দুই মেয়ের মা হয়ে, সংসার সামলে মহিলা ‘অন্তেপ্রেনর’ হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। তবে আমি নিজে ইট কাঠ পাথরের দুনিয়ায় পা
রাখাকে কোনও দিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরিনি। সৃষ্টিশীল কাজের অঙ্গ হিসেবেই বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের নকশা তৈরি করেছি অনায়াসে। কিন্তু ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় ‘নেটওয়ার্কিং’ করতে গিয়েই বুঝেছিলাম, এটা একেবারেই ‘বয়েজ ক্লাব’। ক্লায়েন্ট, সরকারি প্রতিনিধি বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজন, সবারই কেমন একটা মেয়েদের অচ্ছুৎ করে রাখার চেষ্টা। মহিলা ব্যবসায়ী সম্পর্কে আপনাআপনি তৈরি করে রাখা এক ধরনের নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি। ক্রমাগত লড়াই করে সেই দেওয়ালটা ভাঙতে হয়েছে। আর সেটা নিজের ও নিজের সংস্থার মূল্যবোধ বজায় রেখেই। যা বলতে সহজ হলেও, কাজে ততটা নয়।
একটাই আক্ষেপ এখনও থেকে গিয়েছে। মেয়েদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটাতে না পারা। মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে এসে নিয়ম মতোই মাকে খুঁজেছে। কারণ হোমওয়ার্ক করানো বা বাচ্চাদের খুঁটিনাটি সব খেয়াল রাখা সাধারণ ভাবে মায়েরই দায়িত্ব বলে ধরে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু ব্যবসার জগতে ধরা বাঁধা সময় নেই। তাই মেয়েদের পুরো সময় দিতে পারিনি। সেই সময়ে ভাগ বসিয়েছে সংস্থা চালানোর দায়িত্ব। আসলে বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়েছে যাতে কেউ বলতে না পারে - ‘ছেলে নেই। তাই ব্যবসাটা চলল না।’ অনেক সময়ে সংসার ফেলে দিনের পর দিন প্রজেক্ট সাইট-এ থেকেছি। তার একটাই কারণ - নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা। পুরুষদের পৃথিবীতে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা এখনও চলছে। তবে অভিজ্ঞতা ও বয়সের কারণে আগের তুলনায় কাজটা একটু সহজ হয়েছে হয়তো! |
সাক্ষাৎকার: গার্গী গুহঠাকুরতা |
|
|
|
|
|