প্রথমেই বলি ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ বলতে যেটা বোঝায় সেটা আমি নই। জীবনে যেটুকু অ্যাচিভ করেছি সেটা লক্ষ্মী সেজে নয়। ভাল কাজ করে, মন দিয়ে কাজ করে। কাজের ক্ষেত্রে কোনও কম্প্রোমাইজ না করে।
আমার কাছে মেয়েদের সফল হওয়ার আরও ফর্মুলা আছে। যেমন, নিজের কাজের জায়গা যেটা, তার থেকে একটু অন্য রকম জায়গায় নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করা। কেননা যেখানে আমি স্বচ্ছন্দ নই সে রকম জায়গাতেও যদি একবার নিজেকে প্রমাণ করতে পারি তা হলে আমার ট্যালেন্ট সম্বন্ধে লোকের প্রশ্ন তোলাটা বন্ধ হবে। আমার নিজের ক্ষেত্রে যেমন, বিজনেস জার্নালিজম-এর যখন কিছুই জানতাম না তখন নিজে থেকে বিজনেস নিউজপেপারে সাংবাদিকতার চাকরি চেয়ে নিয়েছিলাম। তাও আবার ডেস্কে। ভাবুন, ব্যালেন্স শিট দেখতে অবধি জানি না আর কাজ করি বিজনেস ডেস্কে! তার পর দীর্ঘ ৮ বছর সাংবাদিকতা করার পর ব্যাপারটা যখন বেশ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে বলে মনে হচ্ছে চলে এলাম কর্পোরেট জগতে। কমিউনিকেশন নিয়ে কাজ শুরু করলাম। নিশ্চিন্ত জীবনের গন্ডি পেরিয়ে কর্পোরেট ডকু ছবিও বানিয়েছি। অর্থাৎ সহজ গন্ডি ছেড়ে কঠিনের দিকে চলা! এতে কী হয়, আগে জানতাম না এমন কোনও কাজে সাফল্য পেলে কনফিডেন্স লেভেলটা এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়।
তবে এই যে নিজেকে ক্রমাগত অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা, সেটা করার জন্য কাজের জগতে ব্যস্ত মেয়েদের একটা ভাল সার্পোট সিস্টেম থাকাটা খুব জরুরি। না থাকলে সেটায় চোখ কান বুজে ইনভেস্ট করে ফেলুন। আমি যেটা সারা জীবন করে এসেছি। অর্থাৎ, বাবা-মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাহায্য পেলে দারুণ। না হলে কাজের মেয়ে, বাড়ির ড্রাইভার এদের একদম নিজের করে নিন। দরকার হলে একটু বেশি মাইনে দিন। আমি এটা করে খুব ভাল ফল পেয়েছি। কেননা আমার মনে হয়, রান্না করতে হবে, ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে হবে এই সব টেনশন যদি আমার মাথায় টিকটিক করত তা হলে কখনও নিজের কাজটা মন দিয়ে, ভাল করে করতে পারতাম না! তাই আমার মোটা মাইনের ভাল জীবনের ওরাও কিছুটা হকদার।
আর শেষে বলব, এ সবের বাইরে মেয়েদের সফল হতে গেলে যে জিনিসটা অবশ্যই দরকার সেটা হল মোটা চামড়া। লোকে আপনাকে অনেক কিছু বলবে, আমাকেও প্রচুর শুনতে হয়েছে যে মন দিয়ে সংসারটা করল না, সন্তানের দিকে নজর দিল না, রাঁধতে শিখল না। প্লিজ, কান দেবেন না। যেটা করতে ভাল লাগে সেটাই করুন। আমি সারা জীবন তাই করেছি। এবং এর পরেও আমার বিয়েটা দিব্যি টিকে আছে আর ছেলেটাও একেবারে অমানুষ হয়েছে এমন কেউ বলতে পারবেন না।
|