লক্ষ্মীমন্ত
আমার কাজ হল ভাল গান গাওয়া
মি একেবারেই ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ নই। কোনও দিনই ছিলাম না। হবও না। বরং বেশ দুষ্টুই বলা যেতে পারে। স্টেজে আমার সাজগোজ দেখে অনেকেই আমাকে খুব লক্ষ্মী মেয়ে বলেন। কিন্তু সেটা আমার অনেকগুলো সত্তার একটা। যেটা কাজের জন্যে আমাকে প্রোজেক্ট করতে হয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পীর একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। কিন্তু সেটাই একমাত্র ‘আমি’ নই।
আমার প্রথম অ্যালবাম ‘ফুটস্টেপ্স’ বোরোয় ১৫ বছর বয়সে। আমি, আমান আলি, রাহুল শর্মা, মানে দ্বিতীয় প্রজন্মের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে। বলতে দ্বিধা নেই, ওই বয়সে ও রকম একটা অ্যালবাম অবশ্যই আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজগতে সেই পরিবারের যে প্রভাব, সেই কারণেই সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আসল লড়াইটা তো শুরু হল তার পর। বাবার পরিচয়ে তো আর জীবন চলে না। নিজস্ব একটা সঙ্গীতসত্তা তো দরকার। আর এই কাজটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। বাবা এবং গুরু যেহেতু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, সুতরাং আমার সঙ্গীতজীবনে বিনা পরিশ্রমে সব কিছুই পাওয়া হয়ে গিয়েছে, বা কেরিয়ারটা খুব মোলায়েম হয়ে গিয়েছে, এ রকম অনেক কটাক্ষই শুনতে হয়েছে। সামনে এবং পেছনে। কিন্তু এই সব কটাক্ষ আমাকে দমাতে পারেনি। বংশ-পরিচয় তো আমি অস্বীকার করতে পারি না। এটা এমন একটা ফ্যাক্ট যেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তা সে ভাল হোক বা খারাপ। এবং এটাও ঠিক যে সঙ্গীতজীবনে জন্ম-সূত্রে পাওয়া কিছু সুবিধেও আমি পেয়েছি, যেটা অন্য যাঁরা একেবারে কোনও ব্যকগ্রাউন্ড ছাড়া এসেছেন, তাঁর পাননি। কিন্তু সেটাই তো পুরোটা নয়। বরং আমার মনে হয়, এই পরিচয় নিয়ে আমি কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছি বা পারিনি, সেটাই বিচার্য হওয়া উচিত।
যেমন ধরুন, আমি উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি বা উস্তাদ আমির খানের খুব ভক্ত। আবার অন্য দিকে শোভা গুর্তু এবং বেগম আখতারেরও। অনেকে বলেন আমার গানে শোভা গুর্তুর প্রভাব খুব বেশি। এটা কিন্তু অন্ধ অনুকরণে নয়, বরং ভালবেসে এবং শ্রদ্ধায়। তার সঙ্গে আমি নিজের গায়কি জুড়েছি। বাবার শিক্ষা জুড়েছি। এই যে এত কিছু মিলে মিশে আমার ‘আমি’টা গড়ে উঠেছে, সেটা কিন্তু তেলের সঙ্গে জল মেশানোর মতো হলে হবে না। জলে চিনি গোলার মতো হবে। এমন ভাবে মিশবে যাতে পুরোটাই মিষ্টি হয়ে যায়। এখন আমি নিজেকে নিয়ে আরও এক্সপেরিমেন্ট করছি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে বেরিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা বাংলা ছবিতেও গান গাইছি। এখনও অবধি একটা-দু’টো কাজই করেছি তাই খুব বেশি সমালোচনা শুনতে হয়নি যে ‘এ মা! শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য ছেড়ে শেষে সিনেমার গান!’ তবে আমি জানি আরও বেশি করে এই জাতীয় গান গাওয়া শুরু করলে, যা আমি করবও, সমালোচনা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে একদম রাজি নই। আমার কাজ হল ভাল গান গাওয়া। যে গান গেয়ে আমার শিল্পীসত্তা আনন্দ পাবে সে গান আমি গাইবই। তাতে কে কী বলছে কিছু যায় আসে না!

সাক্ষাৎকার: শতরূপা বসু


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.