|
|
|
|
পাড়ার কুকুরের ‘দাদাগিরি’ দেখে যাচ্ছেন সুইস এলিনা
|
সৌমেন দত্ত • কাটোয়া |
কুকুরের দাদাগিরি। বিষয়, মোটামুটি এটাই। আর এই নিয়ে জানতে সেই সুইৎজারল্যান্ড থেকে সোজা কাটোয়ায় চলে এসেছেন এলিনা। পুরো নাম এলিনা প্যাট্রিজ। সুইৎজারল্যান্ডের জেনিভা শহরের ভেসেনায় তাঁর বাড়ি।
এসেছেন ১৮ সেপ্টেম্বর। তার পর থেকে দুপুরে বাগানে পাড়ায়, বিকেলে তাঁতি পাড়ায় আর সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে মাধবীতলায়। কাটোয়া শহরের বিভিন্ন পাড়ায়, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কুকুরের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছেন তিনি। আর জানার চেষ্টা করছেন, রাস্তার কুকুর কী ভাবে দাদাগিরি করে। কুকুরের দলগুলিতে নেতা-ই বা তৈরি হয় কী ভাবে? এই কাজে তাঁকে সাহায্য করছেন কাটোয়া ভারতী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুনীলকুমার পাল। রাস্তার কুকুরের আচার আচরণ নিয়ে গবেষণা করেই পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি।
অ্যাপ্লায়েড অ্যানিম্যাল বিহেভিয়র সায়েন্স জানার্ল-এ সুনীলবাবুর একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইভিলিন টেরোনি-র সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। সুনীলবাবু বলেন, “ওই অধ্যাপকের মাধ্যমেই এলিনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তিনি আমার কাছে ওকে পাঠিয়েছেন। ও বুঝতে চায়, রাস্তার কুকুরগুলির মধ্যে যে দল-উপদল তৈরি হয়, তাঁদের মধ্যে নেতা কী ভাবে উঠে আসে। একে বলে ‘ডমিন্যান্স ইন ডগস্’।” কাটোয়া আবাসন এলাকায় সুনীলবাবুর বাড়ির কাছেই এলিনা থাকছেন। |
|
বন্ধুত্বের হাত। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় |
এলিনা এ বছর বারো ক্লাস পাশ করেছেন। ওই ক্লাসে পড়ার সময়েই বাড়ির পোষা কুকুরদের নিয়ে তিনি একটি ‘প্রজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরি করেন। জেনিভা অ্যাকাডেমিক সোসাইটি এর জন্য তাঁকে পুরস্কারও দেয়। আর তার পরেই এলিনা ঠিক করে ফেলেন, শুধু পোষা কুকুর নয়। রাস্তার কুকুরদের কথাও জানতে হবে তাঁকে। এলিনার কথায়, “ইংল্যন্ডের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরেনারি সায়েন্স নিয়ে পড়তে চাই। তার আগে পশুদের আচার আচরণ খুঁটিয়ে দেখছি।”
এর পরে? এলিনা জানালেন, ভারত থেকে তিনি যাবেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। সেখানে থাকবেন চার মাস। ওই দুই দেশে তিনি কাজ করবেন চিড়িয়াখানা ও ফার্ম পশুদের নিয়ে।
এলিনার উৎসাহ দেখে খুশি সুনীলবাবুও। এমনই অবস্থা, কুকুরের পিছনে ছুটতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলেছেন। সেই ভাঙা পা নিয়েই এখন দৌড়চ্ছেন পানুহাট থেকে মাধাইতলা। সঙ্গে এলিনা। হাতে বিস্কুট আর পাঁউরুটি। কী ভাবে কুকুরকে পোষ মানাতে হয়, তা নিয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে পাঠ নিচ্ছেন একাগ্র চিত্তে।
কী বোঝা গেল, এ ক’দিনের ট্রেনিংয়ে? এলিনার দাবি, রাস্তার কুকুর আর পোষা কুকুরের মধ্যে নেতৃত্বের ফারাক রয়েছে। পোষা কুকুরদের মধ্যে নেতৃত্বের বদল হয় না। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী রাস্তার কুকুরদের মধ্যে নেতার বদল হয়। এলিনা বলছিল, “কুকুরের দু’টো দলে লড়াই চলার সময়ে রাস্তায় যে নেতৃত্ব দিচ্ছে, হয়তো দেখা যাবে, আঁস্তাকুড়ের খাবার টানাটানি করার সময় সে আর নেতা নেই। নেতৃত্বের এই বদল খুবই চমৎকার। জায়গা-পরিস্থিতি-ঋতুর উপরে নির্ভর করে রাস্তায় কুকুরের দলে ‘দাদা’ উঠে আসে।”
কুকুরের দল অবশ্য অত শত বোঝে না। এলিনার পাশে দিব্যি ঘুরঘুর করছে তারা। |
|
|
|
|
|