পুরুলিয়া পুরসভার ভূমিকায় প্রশ্ন,
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাহেববাঁধেই বিসর্জন
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাহেববাঁধ সরোবরে (ঋষি নিবারণচন্দ্র সায়র) প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছে পুরসভা ও স্থানীয় কিছু পুজো কমিটি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পুজোর আগে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, শহরের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত সাহেববাঁধে এ বার প্রতিমা নিরঞ্জন করা যাবে না। প্রশাসনিক কর্তাদের যুক্তি ছিল, প্রথমত এই সরোবর জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই জলাশয়ের জল শহরে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই অবস্থায় সরোবরকে দূষণ-মুক্ত করার ক্ষেত্রে বিসর্জন না করা হবে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রসঙ্গত, এই সরোবরকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে নানা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ওই সিদ্ধান্তের পরেও শহরের একাধিক পুজো কমিটি সাহেববাঁধে প্রতিমা বিসর্জন করেছে বলে প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। অথচ সাহেববাঁধে বিসর্জনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পুজো উদ্যোক্তাদের যাতে সমস্যায় না পাড়তে হয়, সে জন্য লাগোয়া কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল ট্যাঙ্কে বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ শুক্রবার বলেন, “প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ওই জলাশয়ের ঘাট সংস্কার, কচুরিপানা পরিষ্কার-সহ বেশ কিছু কাজ করানো হয়েছিল, যাতে বিসর্জনে অসুবিধা না হয়। কিন্তু এ দিন শুনলাম, বেশ কিছু পুজো কমিটি বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরেও সাহেববাঁধেই প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে।” তাঁর ক্ষোভ, “ওই জাতীয় সরোবর পুরসভার আওতাধীন। তাদেরই দেখা উচিত ছিল, যাতে ওখানে প্রতিমা বিসর্জন না হয়। আমরা চেষ্টা করছি, জলাশয়টিকে দূষণমুক্ত করার। পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলির কাছ থেকেও সচেতনতা আশা করব।”
নিজস্ব চিত্র
শহরের নর্থলেক রোড সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোক্তা রঞ্জন আচার্যের অবশ্য যুক্তি, “সাহেববাঁধে বিসর্জন দীর্ঘদিনের প্রথা। তা ছাড়া পুলিশের কাছে আমরা যখন বিসর্জনের অনুমতি নিয়েছি, তখন তারা সাহেববাঁধ নিয়ে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা বা আপত্তির কথা আমাদের জানায়নি। পুরসভাও এমন কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা বলেনি। তাই আমরা প্রথা মেনে বিসর্জন দিয়েছি।” শহরের ইউনিয়ন ক্লাব পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমাদের মাথায় ছিল। কিন্তু আমরা তো সপ্তমীর সকালে কলাবউ স্নান থেকে ঘটে জলভরাসব কিছুই অন্য বছরের মতো সাহেববাঁধের জলেই করেছি। পরে বিসর্জনের সময় পুরোহিতের মত নিতে গিয়ে জানলাম, যে পুকুরের জল ঘটে ভরা হয়েছে, সেখানেই বিসর্জন দিতে হবে। তাই এ বার সাহেববাঁধেই বিসর্জন দিয়েছি। পরের বার থেকে পাশের পুকুরে বিসর্জন দেব।” নিমটাঁড় বারোয়ারি পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা বিভাসরঞ্জন দাসের অভিযোগ, “এই ব্যর্থতা পুরসভার। এতদিন ধরে যে প্রথা চলে আসছে, তা ভাঙতে পুরসভার আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল। তা ছাড়া বিসর্জনস্থলে পুরসভার কোনও প্রতিনিধি বা পুলিশও ছিল না। ছিল না নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে কোনও বোর্ডও। ”
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এটা ঘটনা যে, দূষণের বিষয়টি মাথায় রেখে সাহেববাঁধে আর প্রতিমা বিসর্জন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বদলে পাশের পুকুর ব্যবহার করা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সাহেববাঁধে বিসর্জন অনেককালের প্রথা। এটা একদিনে বন্ধ করার অসুবিধা রয়েছে।” তাঁর আরও যুক্তি, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে পুজোর অনেক আগে থেকে যে ধরনের প্রচার-কর্মসূচি চালানো উচিত ছিল, তার সময় এ বার পাওয়া যায়নি। আগামী বার থেকে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস পুরপ্রধানের।
স্থানীয় বিধায়ক কে পি সিংহদেও অবশ্য স্পষ্টই বলেছেন, “আসলে পুরসভা ও প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবের ফলেই এটা ঘটেছে। যা কোনও ভাবেই কাম্য ছিল না।” জেলা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, “সমন্বয়ের অভাব যে আমাদের তরফেও হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে পরের বার থেকে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে দিকে অবশ্যই লক্ষ রাখা হবে।”
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, “আমি শুনলাম, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পুরুলিয়ার ওই সরোবরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। বিশেষ করে ওই জলাশয়ের জল এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ও ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিসর্জন না হতে দেওয়ার ব্যাপারে যাঁদের দায়িত্ব ছিল, তাঁদের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.