|
|
|
|
মহানন্দার বিসর্জন ঘাট পরিষ্কার রাখতে উদ্যোগ শিলিগুড়ি পুরসভার
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
দুটি সেতুর নিচ দিয়ে কুলকুল করে বইয়ে চলেছে মহানন্দা নদী। পুরো সাফসুতরা নদীর ঘাট। বছরের অন্য দিনগুলির তুলনায় চারিদিক অনেকটাই পরিষ্কার। নদীঘাটে কোদাল, বেলচা হাতে বিভিন্ন প্রান্তে তটস্থ পুরসভার কর্মীরা। একটু নোংরা হলেই তাঁরা এগিয়ে গিয়ে সাফ করে দিচ্ছেন। নজরদারিতে পুরসভার কর্তারা। দশমীর রাতভর নদীতে দেবীর বিসর্জনের পরেও একদশীর ভোরেই ভোলবদল হয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদীর। এই নিয়ে পরপর দুইবার। যা গত এক দশকে দেখেননি শিলিগুড়িবাসী!
বৃহস্পতিবার দশমীতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ১৮৬টি পুজোর কমিটির দেবীর বিসর্জন হয়েছে ঘাটে। কিন্তু শুক্রবার সকাল তা দেখে বোঝার উপায় নেই। ঝাঁ চকচকে ঘাট। দেবীর কাঠামো তো দূরের কথা ফুল, বেলপাতা, কলাগাছ, দেবীর সাজসরঞ্জাম একটি অংশই ঘাটে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শহরের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলছেন, “আমরা বোর্ডে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দূষণের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছি। বিসর্জনঘাটের জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। পুজোর সাতদিন আগে থেকে ঘাটে কাজকর্ম শুরু করে দেওয়া হয়। শহরের পুজোর মরশুমে পরিষ্কার, দূষণমুক্ত রাখতে কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।” |
 |
মহানন্দার তীরে নিরঞ্জন ঘাট পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত পুরকর্মীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
এবার মহানন্দার বিসর্জন ঘাটের দেখভাল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য পুরসভার জঞ্জাল, পূর্ত এবং পরিবেশ দফতর একযোগে কাজ করে। সব মিলিয়ে ৫০ জনের উপর সাফাই কর্মীকে ঘাটের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদেরা নিয়মিত ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের কাজের তদারকি করেন। এরই মধ্যে নিরঞ্জন ঘাট জুড়ে অস্থায়ীভাবে প্রচুর আলোর ব্যবস্থা করা হয়। নদীর দু’পাশে থাকা বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের শৌচকার্যের জন্য প্রথমে কিছুটা সমস্যায় পড়তে নজরদারি বাড়িয়ে সেই সমস্যা মেটানো হয়। সাফাই কর্মীদের পাশাপাশি প্রধান বাস্তুকার, ২ জন সহকারি বাস্তুকার, ৫ জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, ২ জন ওয়ার্ক সুপারভাইজার ঘাটের দায়িত্বে ছিলেন। এবার নদীতে প্রতিমা নিয়ে নামার জন্য ছয়টি আলাদা ভাগে ঘাটকে ভাগ করা হয়। ঘাটে চারটি বিরাট মাপের হাইড্রলিক ভ্যাট বসানো হয়। ক্লাব কর্মকর্তাকে তাতেই পুজোর ফুল, বেলপাতা, কলাগাছ, ঘট-সহ সমস্ত পুজোর সরঞ্জাম ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। নদীতে বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো সরিয়ে নদীতে জমা হওয়া পলি মাটিও পরিষ্কার করেন দিয়েছেন পুরকর্মীরা। ডেপুটি মেয়র তথা পরিবেশ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ রঞ্জনশীল শর্মা বলেন, “আমরা ঘাটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ক্লাব কমিটির উপরেও নজর রেখেছি। কেবলমাত্র মণ্ডপের পরিষ্কার নয়, প্রতিমা বিসর্জন অবধি উদ্যোক্তারা কী করছেন তাও দেখা হয়েছে। পুরসভার পুজোর পুরস্কারে এবার এটি বিশেষ দিক।” দমকল, মেডিক্যাল টিম, প্রবীণ বাসিন্দাদের বসার ব্যবস্থা ছিল ঘাটে। এরজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয় পুরসভার পূর্ত বিভাগ। দফতরের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “বালির দয়ে অস্থায়ী ভাবে ঘাট প্রশস্ত করা হয়েছে। এতে পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা হওয়ার ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিল। বিসর্জনের পর নদীর পরিষ্কারে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।” পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, “দশমী এবং একাদশী দুই দিন বিসর্জনের অনুমতি ছিল। এই ৪৮ ঘন্টা তো বটেই সাতদিন আগে থেকে আমরা নদী ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছি। দূষণ যাতে কোনও ভাবেই না হয়, সেই দিকে আমরা সচেতন ছিলাম।” শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় ৩০০ মত দুর্গা পুজোর বিসর্জন হয় মহানন্দাঘাটে। এরমধ্যে ১০০ উপরে পারিবারিক পুজো রয়েছে। দশমী বৃহস্পতিবার হওয়ায় বেশিরভাগ বিগ বাজেটের পুজো কমিটি শুক্রবার বিসর্জন দিয়েছে। দশমীর ভোর ৪টা অবধি বিসর্জন হয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই অবশ্য ঘাটের হাল ফিরিয়ে ঝাঁ চকচকে করেন তোলেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। |
|
|
 |
|
|