|
|
|
|
তথ্যের অধিকার আইনে বদল নিয়ে পিছপা কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন সরকারেরই কিছু শীর্ষ নেতা। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এক পা পিছিয়ে এল কংগ্রেস। দল এখন এ নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক বিতর্কের পক্ষে সওয়াল করছে। কারণ দলের অনেক শীর্ষ নেতাই মনে করছেন, ওই আইন সংশোধনে বেশি সরব হলে এই বার্তা যাবে যে, বিপাকে পড়ে সরকারপক্ষ তথ্য আড়াল করতে চাইছে।
বিতর্কের শুরু, সম্প্রতি ওই আইনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় একটি নোট প্রকাশ করায়। যাতে বলা হয়েছিল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম চাইলে স্পেকট্রাম বণ্টনে অনিয়ম রুখতে পারতেন। এতে তোলপাড় শুরু হয় সরকারের অন্দরমহলে। খোদ আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, বিচারাধীন মামলা নিয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও রক্ষাকবচ সংশ্লিষ্ট আইনে আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিতর্কে অক্সিজেন জুগিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি আইন সংশোধনের পক্ষে সওয়াল করে প্রশ্ন তোলেন, দুই মন্ত্রীর মধ্যে গোপন নোটও যদি এই আইনের আওতায় পড়ে, তবে মন্ত্রিসভার গোপনীয়তা রক্ষা হবে কী করে? পরে সলমনও ফের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনার গোপন নোট তথ্য জানার অধিকারে কতটা প্রকাশ করা উচিত তা বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া আমলারাও এখন ফাইলে নোট লিখতে ভয় পাচ্ছেন। প্রভাব পড়ছে তাঁদের দক্ষতার উপরে।”
উঠে আসে পাল্টা যুক্তিও। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জে এস বর্মার বক্তব্য, “ন্যূনতম গোপনীয়তা বজায় রেখে যথা সম্ভব তথ্য প্রকাশ করার লক্ষ্যে মার্কিন আইন অনুসরণ করেই তৈরি হয়েছে এই আইন। কোনও সৎ আমলার ভয় পাওয়ার কারণ দেখি না। সৎ ভাবে কাজ করলে ফাইলের নোট প্রকাশ করায় কী আসে যায়?” এরই সঙ্গে সলমনের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁর কথায়, “মনে হচ্ছে তথ্য জানার অধিকারে সম্প্রতি যে-সব দুর্নীতি ফাঁস হচ্ছে তা দেখেই সরকার এ সব ভাবছে।”
সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হর্ষ মান্দের-এর আবার বক্তব্য,“তথ্যের অধিকার আইন দেশে লক্ষ লক্ষ লোকপাল তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি দমনে এর থেকে বড় অস্ত্র হয় না।” তবু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এখন কিছুটা পিছপা কংগ্রেস। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, “আইন সংশোধন হবে কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসের কোনও মত নেই। এ নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে।”
পরে দলের এক শীর্ষ নেতাও বলেন, “সমস্যাটা শুধু কেন্দ্রীয় সরকার বা কংগ্রেসের নয়। কংগ্রেস এখন ক্ষমতায়, পরে বিজেপিও আসতে পারে। ফলে সবাইকেই ভাবতে হবে। এক শ্রেণির লোক এই আইনকে অস্ত্র করে এক রকম ব্যবসাই ফেঁদে বসেছে বলেও অভিযোগ। তারা তথ্য বার করে রাজনীতিক ও আমলাদের ভয় দেখাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষে সমস্যা হল, সংশোধনের দাবিতে কেবল কংগ্রেস সরব হলে হিতে বিপরীত হবে। লোকে এ কথাই বলবে যে, তথ্য জানার অধিকারে সরকারের সব দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বলে এখন সংশোধন চাইছে কংগ্রেস। এমনিতে লোকপাল বিতর্কে হাত পুড়েছে দলের। স্বাভাবিক ভাবেই এর পর আর নতুন বিতর্ক চাইছে না কংগ্রেস। বৃহত্তর রাজনৈতিক বিতর্ক হলে, অর্থাৎ বিজেপি ও বাম-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে আলোচনা চাইলে কংগ্রেসও তাতে যোগ দিতে পারে। সেই আলোচনা সংসদেও হতে পারে। |
|
|
|
|
|