|
|
|
|
একাদশীতে ‘লাঠির মেলা’য় মানুষের ঢল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
জনশ্রুতি অনুযায়ী, ইংরেজদের শাসনকালে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার ছিল লাঠি। তাই প্রচুর লাঠির জোগান দিতে কোনও এক সময় বসেছিল ‘লাঠির মেলা’।
জনশ্রুতির কতটা সত্যি, তা অবশ্য যাচাই করার উপায় নেই। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন সেই মেলা আজও বসে। এবং সেই মেলাকে ঘিরে ফি বছর সরগরম হয়ে ওঠে দুবরাজপুরের কৃষ্ণনগর এলাকা। এই মেলাকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের আকর্ষণ এতটুকু কমেনি, বরং বেড়েছে। একাদশীর দিন বসে এই মেলা। স্থানীয় মাত্র ৭-৮ ঘণ্টা। কিন্তু মেলায় লোক সমাগম ও এলাকার বাসিন্দাদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে বেশ কয়েক বছর আগেই ওই মেলার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় স্থানীয় যশপুর পঞ্চায়েত। মেলা বসার উপলক্ষ, এলাকার দুর্গা প্রতিমাগুলির বিসর্জনের দিন উপস্থিত লোকজনের কাছে লাঠি বিক্রি। |
|
ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
যশপুর পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যাচ্ছে, কৃষ্ণনগর গ্রামে যেখানে এই মেলা বসে, সেখানে আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের সমস্ত দুর্গা প্রতিমাকে নিয়ে আসা হয়। এবং শোভাযাত্রা-সহ ঘোরানো হয়। স্থানীয় যশপুর, পছিয়াড়া, লোহগ্রাম, কান্তরী, ঘোড়াতড়ি গ্রামের ১০-১২টি প্রতিমা দেখতে মেলায় ভিড় উপচে পড়ে। মেলা শেষে প্রতিটি প্রতিমাকে সংশ্লিষ্ট গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে নিরঞ্জন করা হয়। মেলায় ঠাকুর দেখা, নাগরদোলায় চাপা, পাপড়, বেলুনের আকর্ষণ তো রয়েছেই, সঙ্গে আছে লাঠি খেলা। বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজিরও রেখে চলেছে এই মেলা। যশপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নাথুরাম ডোম বলেন, “এ বার মেলায় প্রায় ১২০টি স্টল ছিল। স্টলগুলিকে বসতে দিয়ে যে আয় হয়, তার পুরোটাই মেলার পিছনে খরচ করা হয়। প্রয়োজনে পঞ্চায়েতের তরফেও সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা খরচ করার ব্যবস্থাও রয়েছে।”
শুক্রবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল, কমপক্ষে ২০ জন লাঠি বিক্রেতা তাঁদের লাঠির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বেচাকেনা চলছে লাঠির। কেউ কিনছেন মহরমের জন্য, কেউ বা বার্ধক্যের হাতিয়ার হিসাবে। অনেকে আবার স্রেফ শখে বাড়িতে রাখার জন্য দরদাম করে লাঠি কিনছেন। মাঠের মাঝখানের (যেখানে মূল মেলা বসেছে) অংশটি বাদ দিয়ে চারদিকে চওড়া রাস্তা রাখা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে আসা প্রতিমাগুলিতে ওই রাস্তা দিয়েই ঘোরানো হচ্ছে। স্টলগুলিতে এবং রাস্তায় থিকথিক করছে ভিড়। যে দিকে দু’চোখ যায়, শুধুই মানুষের মাথা। শেখ মেহেরুদ্দিন ও শেখ জফিরুল নামে দুই লাঠি বিক্রেতা বললেন, “যতজন লাঠি বিক্রেতা এখানে এসেছেন, তাঁরা সকলেই পাশের ঝড়িয়া মহম্মদপুরের বাসিন্দা। মাস দুই আগেই বাঁশ থেকে লাঠি তৈরির কাজ শুরু করি আমরা।” গড়ে ১০-১৫ টাকা দামের শক্তপোক্ত ওই লাঠিগুলির চাহিদা যে যথেষ্টই, তা-ও জানিয়েছেন ওই দুই লাঠি বিক্রেতা।
মেলায় উপস্থিত সইদুল ইসলাম, শেখ মকবুলদের পাশাপাশি লাঠি কিনলেন লক্ষ্মণ ধীবর, লাল্টু হাজরারা। তাঁদের কথায়, “নানা দরকারে লাঠি লাগে। আর কৃষ্ণনগরের মেলা ছাড়া এত ভাল মানের লাঠি আর কোথায় পাব। তাই কিনলাম।” তবে শুধুই লাঠি কেনার ভিড় হয়েছে, এমন নয়। কাতারে কাতারে গ্রামবাসী এসেছেন দেবী দর্শন করতে এবং অবশ্যই মেলার মজা নিতেও। প্রতিমা দাস, শ্বাশ্বতী চক্রবর্তী, মৌমিতা মুখোপাধ্যায়রা বললেন, “এর আগেও বহুবার এই মেলায় এসেছি। মেলা প্রাঙ্গণে এক সঙ্গে এত প্রতিমা দেখতে খুবই ভাল লাগে। এ ছাড়া মেলার অন্য উপকরণ তো আছেই। |
|
|
|
|
|