অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা নিয়েই পুজো কাটাচ্ছেন রাজ্য সরকারের অধিগৃহীত সংস্থা ও নিগমগুলির কর্মীরা। আপাতত বেতন দিলেও অবসর ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। পুজোর আগে অনেক সংস্থার কর্মীরা বেতন ও অগ্রিমও পাননি। ভর্তুকি দিয়ে ওই সব সংস্থার পুরো আর্থিক দায় আর নিতে রাজি নয় রাজ্য। ইতিমধ্যে এ কথা সংস্থাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে পালাবদলের পরে। বাম আমলের শেষ দিকেই রাজ্য আর্থিক ভাবে চাপের মধ্যে পড়ে। তার রেশ পড়েছে তৃণমূল-কংগ্রেসের জোট সরকারের উপর। অর্থ দফতরের খবর, গত কয়েক মাসে সঙ্কট আরও প্রকট হওয়ায় ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পথ নিতে হয়েছে রাজ্যকে।
রাজ্যের মোট ১০ লক্ষ সরকারি কর্মীর মধ্যে অধিগৃহীত সংস্থা ও নিগমে আছেন প্রায় দেড় লক্ষ। এর চার শতাংশ প্রতি বছর অবসর নেন। এঁদের অবসরকালীন পাওনা মেটাতে তিন মাস অন্তর অর্থ দফতরের কাছে ফাইল পাঠায় নিগম ও সংস্থাগুলি। মহাকরণের খবর, মে মাসে নতুন সরকার আসার পর অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি ও ছুটি বিক্রির টাকা চেয়ে ফাইল আসে অর্থ দফতরে। কিন্তু সেই টাকা এখনও পায়নি সংস্থাগুলি। অর্থ দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সংস্থাগুলির কর্মীদের বেতনের দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে। কিন্তু অবসরপ্রাপ্তদের পাওনাগণ্ডা যে সংস্থাগুলিকেই মেটাতে হবে, তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
মাস তিনেক ধরে পেনসন পাচ্ছেন না উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের প্রায় আড়াই হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। পুজোর আগে পর্যন্ত সংস্থার বর্তমান কর্মীরা অগস্ট মাসের বেতনও পাননি। সংস্থার আইএনটিইউসি প্রভাবিত কর্মিসমিতির সাধারণ সম্পাদক সত্যানন্দ দত্ত বলেন, “বাম সরকারের অপশাসন নিয়ে সরব হয়েছিলাম, কিন্তু ওদের আমলেও এ রকম অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি। কর্মীদের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না।” নিগমের কর্মীরা অগ্রিম, বোনাস পাননি বলে জানান তিনি। সত্যানন্দবাবু জানান, পুজোর পর আন্দোলন শুরু করবে কর্মসমিতি। ওই নিগমের প্রায় ৩৭০০ স্থায়ী কর্মীর জন্য মাসে বেতন বাবদ ৪ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব তারাপদ মাঝি বলেন, “ভর্তুকির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এত টাকা সরকার দেবে কোথা থেকে? বিভিন্ন নিগমের ৮০% খরচ বহন করছে সরকার। তবে এ বার থেকে খরচ নিগমকেই বহন করতে হবে!” মহাকরণ সূত্রে খবর, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে সরকারি পাঁচটি পরিবহণ নিগমের জন্য রাজ্যকে ৪১৯ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে বলে বাজেটে ধরা হয়। কিন্তু বছর শেষে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫২৩ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবর্ষের শেষে ওই অঙ্ক ৬২৫ কোটিতে দাঁড়াবে বলে ধারণা কর্তাদের।
সিএসটিসি এবং সিটিসি-র কর্মীরা অবসরের সময়ে জমানো ১০ মাসের ছুটি বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা সেই সুযোগ পাননি। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন দুই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টররা। পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী অবশ্য বলেন, “নিগমগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকার ওদের যাবতীয় খরচ বহন করতে বাধ্য নয়, পারবেও না।” সম্প্রতি রাজ্যের পরিবহণসচিব বি পি গোপালিকা নিগমের কর্তাদের মহাকরণে ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন, এ বার থেকে পাঁচটি নিগমকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
একই ভাবে রাজ্য ক্ষুদ্র সেচ নিগমে ৯৬০ জন কর্মী রয়েছেন। সরকার তাঁদের বেতনের টাকা দিচ্ছে। কিন্তু জুলাই মাস থেকে সংস্থার অবসরপ্রাপ্তরা তাঁদের পাওনা পাচ্ছেন না। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্বপন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের নিগমের আয় নেই। সরকারের কাছে বার বার টাকা চেয়ে ফাইল পাঠাচ্ছি।” দুশ্চিন্তায় আছেন আর একটি সরকারি সংস্থা ‘হিমুল’-এর কর্মীরাও। তাঁরা চাইছেন, পাওনা আদায়ের জন্য সকলে মিলে আন্দোলনে নামতে। |