পুজোর সময়ে ভিড় উপচে পড়ত মণ্ডপে। রাত জেগে চলত ঠাকুর দেখা। পুজোর আয়োজন নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ আর জঙ্গিপুরের মধ্যে এক রকম রেষারেষিও ছিল। তবে এ বারের পুজো একেবারেই আলাদা। জঙ্গিপুরে এ বার দর্শকদের ভিড় প্রায় ছিলই না। অন্যান্য বারের মত নবমীর রাতেও ঠাকুর দেখার লাইনও পড়েনি সেরকম।
জঙ্গিপুর ও রঘুনাথগঞ্জের পুজোর সংখ্যা প্রায় ৩৫। তবে এবার প্রতিটি পুজোরই জাঁকজমক অনেক কম। জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামে বাজেট কমেছে বেশির ভাগ পুজোরই।
সাহেববাজার স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের পুজো জঙ্গিপুরের অন্যতম সেরা পুজোর একটি। এ বছর সেই পুজোর বাজেটেও কাট-ছাঁট হয়েছে। ক্লাবের সভাপতি তাপস পালের কথায়, “অন্য বারের থেকে বাজেট বাড়িয়েও পুজো চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। আলোর খরচও অন্য বারের তুলনায় প্রায় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এ বার আমরা ঝিনুকের প্রতিমা তৈরি করেছি। স্বভাবতই তার খরচও বেড়ে গিয়েছে।” তাপসবাবু বলেন, “মানুষ সুযোগ সুবিধা মতো ৪ দিন ধরে ঠাকুর দেখে। সব দিন সমান ভিড় চোখে পড়ে না।”
রঘুনাথগঞ্জের চৈতক অ্যাথলেটিক ক্লাবের সহ-সম্পাদক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জিনিসের দাম এত বেড়েছে যে বাজেট বাড়াতেই হয়েছে। স্বভাবতই মানুষের উপরে চাপ তো বেড়েছে। আমাদের চাঁদা তোলা তো পাড়ার মধ্যেই তো সীমাবদ্ধ।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য যুক্ত রয়েছেন দু’টো পুজোর সঙ্গে। তিনি বলেন, “পুজোর জৌলুস শহরে অনেকটাই ফিকে হয়েছে। চাঁদা আয় বাড়েনি, তবে খরচের পরিমান বেড়েছে। আমার পাড়ায় দুটো বড় বাজেটের পুজো হয়। মণ্ডপ আর আলোকসজ্জায় নজর কাড়তে যে টাকার প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না।”
মুক্তিপ্রসাদ ধর দু’টি পুজোর সভাপতি। তিনি বলেন, “এখনও মানুষ পুজোর চাঁদায় ১০ থেকে ২০ টাকা দেন। এ ভাবে চলে কী করে? ”
আইনজীবী দিলীপ সিংহ বলেন, “নজরকাড়া আয়োজন কোথাও নেই। পেটকাটি ও কোদাখাকির মত ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজোতেও দর্শকের সংখ্যা কম।” ডাক বিভাগের কর্মী গোপাল সাহা বলেন, “এবার দর্শকদের উচ্ছ্বাস অনেকটাই কম। সব পাড়াতেই পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। দর্শক কমার এটাও একটা কারণ।”
ডেকরেটর বিপ্লব দাস বলেন, “ভাল প্যান্ডেল তৈরি করতে মোটা টাকা প্রয়োজন। মফস্সলে সেই চাঁদা ওঠে না। আমাদেরও কিছু করার নেই। সব কিছুরই খরচ বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি ৮০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। থার্মোকল, কাপড়ের দামও বেড়েছে। বাইরের সাজসজ্জার থেকে পুজো উদ্যোক্তারা মণ্ডপের ভিতরের সাজ-গোজের উপরে বেশি জোর দিয়েছেন। এতে খরচ খানিকটা কমলেও মানুষকে সেভাবে আকর্ষন করতে পারছে না। দর্শক কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এটাই।” |