পদ্মা লাগোয়া নির্মলচরের জনপদ ভেসেছে বানের জলে। তাই চরের পুজোয় আনন্দের সঙ্গে লেগে রয়েছে বিষাদ। জৌলুসহীন গতানুগতিক ভাবে এবছর চরের পুজো সম্পন্ন হয়েছে।
পুজোর মুখে এক টানা বৃষ্টিতে পদ্মার জল ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা পাট। পেকে ওঠা আউস ডুবেছে বন্যায়। কলাই ধানও জলে ভেসেছে। ফলে পুজোয় ভগবানগোলা-২ ব্লকের পদ্মাবেষ্টিত নির্মলচরের ৫টি সংসদ এলাকার অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের গায়ে ওঠেনি নতুন পোশাক। গত বছর পুজোয় কেনা পোশাক গায়ে চড়িয়ে মণ্ডপে খেলা করে বেড়াচ্ছে নির্মলচরের শৈশব!
নির্মলচরের ৫টি সংসদ এলাকায় এ বছর তিনটে দুর্গাপুজো হয়েছে। তখন পর্যন্ত বানের জল নামেনি বলে নির্মলচরের নতুন রাজাপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির ভঞ্জনকুমার মণ্ডল বলেন, “কলার ভেলার উপরে দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর পরিকল্পনা করি। কিন্তু ষষ্ঠীর দিন বানের জল সরে যাওয়ায় পুজোর আয়োজন সম্ভব হয়েছে। উত্তর, দক্ষিণ ও নতুন রাজাপুর তিনটে গ্রামের ৭০ ঘর বাসিন্দা মিলেমিশে পুজো করে থাকি। কিন্তু এখনও দক্ষিণ রাজাপুর বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেখানে কোমর অবধি জল। টিনের ডোঙা করে ওই এলাকার মানুষ অঞ্জলি দিতে আসেন।”
নতুন রাজাপুর মাঠপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক সুনীল মণ্ডল বলেন, “টিনের ছাউনি দেওয়া পাটকাঠির বেড়ার মন্দির। পুজোর মুখে বানের জল সরে যাওয়ায় মাটির উঁচু ঢিবি এখনও স্যাঁতসেতে হয়ে রয়েছে। মন্দিরের চারপাশ কাদায় ভরা। তারই মধ্যে গতানুগতিক ভাবে পুজো করতে হয় তাই করা। কেননা, বানের জলে চাষাবাদ সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চরের জমিতে লাগানো কলাই হলে ধান ও পাটের ক্ষতি পুষিয়ে যেত। কিন্তু পুজোর আগে এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় কলাইও ডুবে যায়।” সুনীলবাবু বলেন, “এলাকার বেশির ভাগ পরিবারের সদস্যদের নতুন জামা-কাপড় হয়নি।”
রাজাপুর মহিষমারি দুর্গোৎসব পুজো কমিটির সম্পাদক পবন মণ্ডল বলেন, “পদ্মার জলে যাতে মায়ের প্রতিমা ডুবে না যায়, এজন্য মাটি ফেলে উঁচু ঢিবি করে তার উপরে সামিয়ানা টাঙিয়ে দেবীদুর্গার পুজো হচ্ছে। পুজো মণ্ডপের চারপাশ এখনও জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে রয়েছে।” ওই পুজো কমিটিগুলির পুজোয় জৌলুস নেই হয়তো কিন্তু আচার-রীতি মেনে পুজোর আয়োজনে তাঁদের কোনও খামতি নেই।
চরে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। জেনারেটরের আলোয় পুজো মণ্ডপ চত্বর আলোকিত। নতুন রাজাপুরে এক চালার প্রতিমা হলেও নতুন রাজাপুর মাঠপাড়া ও রাজাপুর মহিষমারি পুজো কমিটির প্রতিমা পৃথক চালার। কোথাও কাশফুলের সাজে সজ্জিতা দেবীদুর্গা। নেই রাজ্যের বাসিন্দা হতে পারে কিন্তু আন্তরিকতায় তাঁদের কোনও কার্পণ্য নেই। তাই সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিন দিনই পুজোর ভোগ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে।
পরনে নেই পুজোর নতুন জামা। নির্মলচরে জেনারেটরের তীব্র আলোর ছটা ঢাকতে পারেনি কচিমুখের মলিনতা। তাই চরের দেবীদুর্গাও বিষাদময়ী! প্রতি বছর পদ্মার জলে বিসর্জন হয়ে থাকে চরের প্রতিমা। বিসর্জনের আগে চরবাসীদের তাই একটাই প্রাথর্নাসামনের বছর অসুরের পাশাপাশি বন্যা বধের কাহিনিও রচনা করো। অন্য দিকে ডোমকল মহকুমা এলাকায় চরের পুজো বলতে এক মাত্র রানিনগর চরদুর্গাপুরে দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়েছে। স্থায়ী পাকা মন্দিরে পুজো। প্রতিমায় ডাকের সাজ। পদ্মার পাড় ঘেঁষা ওই জনপদে এখনও বিদ্যুৎ যায়নি। তাই হ্যাচাকের আলোয় উদ্ভাসিত দেবীদুর্গা। |