|
|
|
|
আমার পুজো |
ক’দিন গোগ্রাসে পড়ি শারদীয়া সংখ্যাগুলো |
মানস ভুঁইয়া
(
রাজ্যের সেচমন্ত্রী) |
পুজো এলেই স্মৃতির সাগরে ডুব দিতে ইচ্ছে করে। পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো যে বড্ড মধুর। আমরা পূর্বপুরুষেরা ছিলেন জমিদার। কোলনদা গড়ের ভুঁইয়া পরিবারকে সবাই জানে। যদিও বাবা পুলিনবিহারী ভুঁইয়া কোলনদা গড় থেকে বেশ কিছুটা দুরে ভিখনি নিশ্চিন্তিপুরে বাড়ি করেছিলেন। আমরাও সেখানেই থাকতাম। কিন্তু পুজোর সময় সকলেই কোলনদাগড়ে যেতাম। তখনও সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কপালেশ্বরী নদী দিয়ে নৌকোতেই যাতায়াত করতে হত। নৌকোয় ৮-১০ ঘন্টা সময় লাগত কোলনদা পৌঁছতে। নৌকাতেই রান্না হত। বাবা পুলিনবিহারী ভুঁইয়া ও মা সত্যবতী দেবী নিজেরাই রান্না করতেন। তারপর কোনও একটা ভাল জায়গা দেখে নদীর কিনারায় ভিড়িয়ে দেওয়া হত নৌকা। সেখানে নোঙর করে নদীর বাঁধে খাওয়া-দাওয়া হত। গলদা চিংড়ি, ফুলকপির তরকারি এখনও সেই স্বাদ মুখে লেগে রয়েছে। এই সব স্মৃতি যে কী ভীষণ আনন্দের, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
পুজোর আনন্দ তো রয়েছেই। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, নানা অনুষ্ঠান। তবে একটা মুহূর্তের জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করতাম। তাহল কুমারী পুজো। এই পুজোর আগে শূন্যে গুলি ছোড়া হত। বাবা বন্দুক নিয়ে তৈরি হতেন। তারপর শূন্যে গুলি চালাতেই শুরু হত অষ্টমীর কুমারী পুজো। তখন আমি খুবই ছোট। গুলি চালানোর বিষয়টি মনে ভীষণ রোমাঞ্চ জাগাত। এখন কোলনদাগড়ে যাই। মোটরসাইকেল নিয়ে সবংয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াই পুজোর সময়। কোলনদাগড়ে তো আমার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সেখানে গ্রামের ছেলে। আমার ডাক নাম মানু। এখনও সকলে মানু বলেই ডাকে। এক সঙ্গে মজাও করি। এখন অবশ্য সব সময় নিজে যেতে পারি না। তবে ভাই বিকাশ, তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের অন্যরা যায়। আর গোটা সবং-ই আমার গ্রাম। আমার ঠিকানা। সবাই আমার নিজের।
আগের মতো অবশ্য আর পুজোয় ঘোরা হয় না। বাড়িতে বসে শারদীয়া পত্রিকাগুলো পড়ি। বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ আমার বহু দিনের। যতগুলো পুজোসংখ্যা বেরোয় সবই গোগ্রাসে পড়তে থাকি। স্ত্রী গীতারানিকে বেশি সময় দিই। যদিও উনি সব সময় আমার ছায়াসঙ্গী হিসাবে থাকেন। পুজো দেখা থেকে রাজনৈতিক মিটিং সব সময় আগলে রাখেন। কিন্তু অন্য সময়ের থেকে পুজোর সময়টা তো একটু আলাদা। ছেলে কৌশিক তো বিদেশে থাকে। এখন অবশ্য আমেরিকাতেও দুর্গাপুজোর চল অনেকটাই বেড়েছে। সেখানে ছেলে নিজেও একটি পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে জানাল। আমরা এখানে বসে পুজোয় মেতে উঠেছি, ছেলে আমেরিকাতে থেকেও পুজোয় মেতেছে জানতে পারে আনন্দ আরও একটু বেড়ে গেল।
তবে পুজো উদ্বোধনে এখন আর যায় না। প্রচুর অনুরোধ আসে। কিন্তু একটা সমস্যাও রয়েছে। সব পুজো কমিটিতে পৌঁছনো অসম্ভব হয়ে পড়ে। সময়ে কুলোবে না। সেক্ষেত্রে অনুরাগীদের অভিমান হয়। ভালবাসলে তো দাবি থাকবেই যে সব জায়গাতে যাব, তাই অভিমানও স্বাভাবিক। আমি পুজোর সময় কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। তাই পারলে এমনিতেই পুজো দেখার জন্য যাব, কিন্তু উদ্বোধন নয়। |
|
|
|
|
|