|
|
|
|
কবিকঙ্কণের স্মৃতিমাখা পুজো |
কিংশুক আইচ • মেদিনীপুর |
ভাগ্যের ফেরে বর্ধমান থেকে অধুনা কেশপুরের আনন্দপুরের আড়রায় দেব পরিবারের জমিদারিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম। এখানেই চণ্ডীমঙ্গল লেখেন কবি। জমিদারবাড়ি পরে স্থানান্তরিত হয় মুগবাসনের সেনাপত্যায়। জমিদারবাড়িতে দুর্গাপুজো প্রচলিত ছিল। সেই হিসাবে গড় সেনাপত্যার পুজো ৫০০ বছরের পুরনো। পুজোর সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে কবিকঙ্কনের স্মৃতি। জড়িয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতিও। কেশপুর থেকে মুগবাসন, সেখান থেকে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে সেনাপত্যা। একেবারে সনাতন গ্রাম। মাটির বাড়ি। বর্ধিষ্ণু গ্রামের ছাপও রয়েছে। আটচালা, তার পিছনে মহামায়া মন্দির। সেখানেই হয় দুর্গাপুজো। চার পাশে দেব পরিবারের নানা শরিকের বাড়ি। পাশেই আর এক মন্দিরে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি রয়েছে।
জমিদারি গিয়েছে। বিষয়-আশয়ের বহু ভাগ। প্রতি শরিকের উপরে পালা করে পড়ে পুজোর ভার। তবে সবার মাথার উপরে রয়েছেন প্রবীণতম লক্ষ্মণচন্দ্র দেব। কোনও কোনও গবেষকের মতে, আড়রার জমিদারবাড়িতে জমিদার বাঁকুড়া রায় এই পুজোর প্রচলন করেন। যদিও তাঁর আরাধ্য ছিলেন চণ্ডী। লক্ষ্মণবাবু জানান, পুজোর আচার, মন্ত্র, প্রতিমা সবেরই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একচালার প্রতিমা। দুর্গাই শুধু মৃন্ময়ী। |
|
নিজস্ব চিত্র |
লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আঁকা হয় চালচিত্রে। দেবী অষ্টাদশভুজা। ডান দিকের ন’টি হাতে থাকে ত্রিশূল, গদা, শক্তিশূল, বজ্র, খড়্গ, অঙ্কুশ, শর, চক্র ও শলাকা। বাঁ-দিকের হাতগুলিতে কেশ, ষষ্ঠী, ঘণ্টা, দর্পণ, রজ্জু, পতাকা, ধনুক, ডমরু ও সাপ।
এক সময়ে এই জমিদারি ছিল বর্ধমান-রাজের অধীনে। রাজার এক দূত এক দিন জমিদার উমাপতি রায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি তখন নেড়াদেউলের কামেশ্বর শিবমন্দিরে ধ্যান করছিলেন। ধ্যানরত অবস্থাতেই দূতের অবস্থান জেনে উমাপতি পিছনের দিকে হাত দিয়ে তাঁকে বসতে বলেন। এই কথা শুনে বর্ধমানরাজ উমাপতিকে ‘দেব’ উপাধি দেন। সেই থেকে রায় পরিবার ‘দেব’ উপাধি ব্যবহার করতে শুরু করে। জিতাষ্টমীর পরে কৃষ্ণা-নবমীর দিনে অম্বিকার পুজো হয়। পরের ১২টি তিথি ধরে মোট ১৩টি তিথিতে মহিষাসুরের সঙ্গে দুর্গার যুদ্ধের ১৩ রূপের পুজো হয়। পুজোর সময়ে কবিকঙ্কন স্বয়ং চণ্ডীমঙ্গল পাঠ করতেন বলে জনশ্রুতি। পুজোর মন্ত্রপাঠ হয় পারিবারিক হাতেলেখা পুথি অনুসারে। পুজোয় ২টি ঢাক, ২টি ঢোল আর সানাই বাজাতেই হবে। বসে নহবতও। পুজোর কাজকর্ম বাড়ির মহিলারাই করেন। এককালে কয়েক হাজার লোক প্রতিদিন দেবীর ভোগ পাত পেড়ে খেতেন। এখনও পঙ্ক্তিভোজ চালু রয়েছে। ষষ্ঠী থেকে চার দিন বসে যাত্রার আসর। পরিবারের যে সব সদস্য বাইরে থাকেন, তাঁরাও আসেন। পারিবারিক মিলন-মেলায় মাতেন ছোটবড় সব সদস্য।
|
|
|
|
|
|