কলকাতার ক্রিকেটভক্তদের জন্য পূজোর আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিয়ে গেল নবমীর রাত। অধীর আগ্রহে যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কঠিন অঙ্কের বাঁধা পেরিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স সেমিফাইনালে পৌঁছতে পারে কি না তা দেখার জন্য, তাঁদের হতাশই হতে হল। এ বছরের মতো অভিযান শেষ হয়ে গেল শাহরুখ খানের দলের।
শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় যোগ্যতার উপর কেকেআর-এর ভাগ্য আর নির্ভর করে ছিল না। ছিল প্রকৃতির উপর। যদি আকাশ মেঘলা হয়, কেকেআর-এর রোদ্দুর উঠবে। যদি পরিষ্কার আকাশ থাকে তা হলে কেকেআর-এর জন্য কালো মেঘ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স জিতলে তারা বেরিয়ে যাবে। যেহেতু তারা নেট রানরেটে কেকেআর-এর চেয়ে এগিয়ে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া জিতলে তারা বেরিয়ে যাবে। যেহেতু তারা কেকেআর-এর চেয়ে পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে। এই অঙ্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেকেআর-এর বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু পূর্বাভাস মতোই সারা দিনে বৃষ্টির আর দেখা পাওয়া যায়নি।
রাত আটটার ম্যাচ শুরু হতে না হতেই প্রার্থনার সুর দ্রুত ফিকে হতে শুরু করে। দশ ওভার হয়ে গেলেও বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে প্রথম ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে ফেলল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন ওপেনার ড্যানিয়েল হ্যারিস। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ৫০ তুলে ফেলে মাত্র ৪.২ ওভারে। আর কখন বৃষ্টি নামবে? হ্যারিস যত আলোর রোশনাই জ্বালিয়ে দিতে থাকেন ততই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে কেকেআর। মাত্র ৫৮ বলে সেঞ্চুরিও পূরণ করে ফেলেন তিনি। ২০ ওভারে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া তোলে ২১৪-২। হ্যারিস ৬১ বলে ১০৮ নট আউট। বৃষ্টি? তখনও চিহ্ন নেই কোনও।
বরং দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে কেকেআর। গৌতম গম্ভীরদের শেষ চারে দেখা যাবে কি না তা নিয়ে আলোচনা থেমে গিয়েছে। যাবতীয় কৌতূহল তখন একটাই। হ্যারিসের মারকাটারি ইনিংসের জবাব দিয়ে ক্রিস গেইল বিজয় মাল্যর বেঙ্গালুরুকে সেমিফাইনালের টিকিট এনে দিতে পারবেন কি না! গেইল অবশ্য পারলেন না। ফিরে গেলেন ২৬ করে। তবে অসাধ্য করলেন বিজয় মাল্যর দলের অন্যরা। দিলশান (৪৭ বলে ৭৪) ও কোহলির (৩৬ বলে ৭০) দাপটে শেষ পর্যন্ত জয় এল বেঙ্গালুরুর। তবে আসল কাজটা করলেন অরুণ কার্তিক। শেষ বলে দরকার ছিল ৬। এবং চূড়ান্ত নাটকীয় ভাবে সেই ছক্কাই এল তাঁর ব্যাট থেকে। সেই সঙ্গে শেষ চারের টিকিট।
এমনিতে কেকেআর সমর্থকদের জন্য দশমীর আবহাওয়া এসে পড়তে শুরু করে বিকেল চারটের ম্যাচ থেকেই। বেঙ্গালুরুতেই দু’টো ম্যাচ ছিল। চারটের ম্যাচটা নির্বিঘ্নে হয়ে গেল। ওয়ারিয়র্সকে হারিয়ে শেষ চারে পৌঁছে গেল সমারসেট। প্রথমে ব্যাট করে সমারসেট ২০ ওভারে তোলে ১৪৬-৪। সর্বোচ্চ রান করেন কাইসোয়েটার (৫২ বলে ৫৬ নট আউট)। কিন্তু সমারসেটের জয়ের আসল নায়ক তাদের অধিনায়ক আলফানসো থমাস। বল হাতে তিনিই ওয়ারিয়র্সকে আট উইকেটে ১৩৪-এর বেশি এগোতে দেননি। চার ওভার বল করে আলফানসো দেন মাত্র ১৬ রান। সঙ্গে তুলে নেন দু’টি উইকেট।
কেকেআর-এর সেমিফাইনাল আশা তখন থেকেই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে পড়ল। এবং হ্যারিসের ব্যাটিং-ঝড়ে আর বেঙ্গালুরুর অবিশ্বাস্য জয়ে এ বারের মতো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। |