গোয়ালতোড়ে পুজোয় ফের জীবনের জয়গান
ত দু’বছর পুজো হয়েছিল ওই হতে হয় তাই গোছের। বাতাসে তখন বারুদের গন্ধ। নিত্য অশান্তি। খুন-সংঘর্ষ-তিক্ততা। পুজোয় প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হবেই বা কী করে! ক্ষমতার পালাবদল সেই শ্বাসরুদ্ধ অবস্থাটার একটা আপাত পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তাই এ বার ফের চেনা চেহারায় পুজো হচ্ছে গোয়ালতোড়ে। দু’বছরের অবরুদ্ধ আনন্দ ফের বাঁধ ভেঙেছে জঙ্গলঘেরা গ্রামগঞ্জে।
এক দিকে মাওবাদী তো অন্য দিকে যৌথ বাহিনী। এক দিকে জনগণের কমিটির ‘মিলিশিয়া’ তো অন্য দিকে সিপিএমের বাহিনী। যারা এর মাঝখানেতাদের তো প্রাণান্ত। গত দু’বছর ধরে এই অবস্থাই তো চলেছে গোয়ালতোড়ে। এ বার ব্লকের দশটি পঞ্চায়েত এলাকাতেই পুজোয় ফিরেছে আগের জাঁক-জৌলুস। ষষ্ঠীর দিন থেকেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে জনতার ঢল জানান দিয়েছে মানুষ শান্তি চাইছেন। মহিলা ও শিশুদের আনন্দটা ছিল চোখে পড়ার মতো।
আমলাশুলির মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
২০০৯-এ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাওবাদী-কমিটির প্রতিপত্তি ছিল যথেষ্টই। জোর করে লোকজনকে মিটিং-মিছিলে নিয়ে যাওয়া, যখন-তখন চাঁদা বা চাল-ডালের দাবিও লেগেই ছিল। আর তাদের খোঁজ পেতে ছিল যৌথ বাহিনীর নিত্য আসা-যাওয়া। যে বাহিনীর বিরুদ্ধেও উঠেছে ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ। অনেকেই অশান্তির জেরে ঘরছাড়া হয়ে মাসের পর মাস ত্রাণ-শিবির বা দূরে আত্মীয়বাড়িতে থাকতেও বাধ্য হয়েছেন। পুজোর পরিবেশটাই কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছিল। গত বছর আবার সিপিএমের এলাকা ‘পুনর্দখল’ ঘিরে ছিল চরম অস্থিরতা। এ বার সে-সব অতীত হয়ে গিয়েছে। নতুন শাসকদল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশের আচার-আচরণ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও তা এখনও ততটা প্রকট নয়। আর এর ফলেই গোয়ালতোড়ের মাকলি, পাথরপাড়া, সুন্দরগেড়িয়া, কাদাশোলে কিছুটা হলেও ফিরেছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। পুজোও হচ্ছে তাই পুরোনো মেজাজে।
গোয়ালতোড় শহরে চারটি সর্বজনীন পুজো হচ্ছে বড় বাজেটে। শহরের মিলনী সঙ্ঘের পক্ষে তুহিনশুভ্র রায় বলেন, “এ বার পুজোর প্রতিদিনই হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোকসজ্জাও আর একটা উল্লেখযোগ্য দিক আমাদের পুজোর।” গোল্ডেন ক্লাবের প্রণব বিশুই ও ভ্রাতৃ সঙ্ঘের সঞ্জয় মণ্ডলেরাও বলেন, “নরনারায়ণ সেবা থেকে বস্ত্র বিতরণআমাদের পুজোর আগের যা বৈশিষ্ট্য, এ বার সবই ফিরিয়ে এনেছি। এলাকার পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না বলেই গত দু’বছর আমাদের অনেক ইচ্ছাই পূরণ হয়নি। এ বার সবাই ফের পুজোর আনন্দে মেতেছেন।” গত দু’বছর যেখানে রাত আটটার পরে কোনও মণ্ডপেই আর মানুষজনকে বিশেষ দেখা যেত না, এ বার সেখানে রাত বারোটাতেও ভিড় হচ্ছে, জানাচ্ছেন তুহিনবাবুরাই।
গত বছর যে আমলাশুলি সংলগ্ন টেসকোনা ছিল মাওবাদী-সিপিএম লড়াইয়ে অস্থির, এ বার সেখানেও জাঁক করেই পুজো হচ্ছে। শান্তির বার্তা দিতেই বোধহয় সেখানে এ বার মণ্ডপ হয়েছে বুদ্ধ-মন্দিরের আদলে। পঞ্চমীর দিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা উদ্বোধন করেন এই পুজোর। পুজো-কমিটির পক্ষে বরেন মণ্ডল বলেন, “বড় মণ্ডপ ছাড়াও সাত দিন ধরে হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রয়েছে বস্ত্র বিতরণ, পঙ্ক্তিভোজের ব্যবস্থাও। একই ভাবে মাকলির শশাবেদিয়া, কুলডাঙা কিংবা পাথরপাড়ার সুন্দরগেড়িয়ার পুজোতেও অশান্তি ছাপিয়ে জীবনেরই জয়গান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.