যেও না নবমী নিশি।
এ কথাটাই যেন বলতে চাইছিলেন সকলে। বুধবারের বিকেল থেকেই উলুবেড়িয়ার রাজপথ, গলিপথে মানুষের ঢল। যা ছাপিয়ে গেল আগের দিনগুলির ভিড়কেও।
নজরকাড়া মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোর কারসাজিতে এ বার বাজিমাত করেছে উলুবেড়িয়া শহর। একই সঙ্গে লাগোয়া শিল্পাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে পুজোর আনন্দ। উলুবেড়িয়া স্টেশন রোডের মোড় থেকে ও টি রোড ধরে মহকুমাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত এলাকা হল শহর উলুবেড়িয়ার প্রাণকেন্দ্র। তা বিস্তৃত হয়েছে কিছুটা দূরে কালীবাড়ি পর্যন্ত। ও টি রোডের ধারেই তৈরি একের পর এক মণ্ডপ। শেষ হয়েছে কালীবাড়িতে। কালীবাড়ির দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছে ও টি রোডের ধার এবং সংলগ্ন এলাকার সর্বজনীন পুজোগুলির আধুনিকতা।
কালীবাড়ির দুর্গাপুজো প্রতিবছরই দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। এক সময়ে কৃষ্ণনগর থেকে শিল্পীরা এসে মন্দিরে বসে প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন আর সেই ব্যবস্থা নেই। তবুও থেকে গিয়েছে ঐতিহ্য। সেটাই কালীবাড়ির দুর্গাপুজোকে অন্যদের সঙ্গে আলাদা করে দিয়েছে বলে দাবি করেন সংগঠকেরা।
এ বছর থেকেই উলুবেড়িয়া শহরে থিম-এর পুজো শুরু হল। স্যুইমিং পুলের কাছে আমরা সবাই-এর উদ্যোগে থিম-এর পুজো চালু হয়েছে। পুজোর ভাবনায় তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীন বাংলার একটা খণ্ডচিত্র। মডেলের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের জীবনধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিখুঁত ভাবে। তৈরি হয়েছে কৃত্রিম বটতলা। পুজোর আবহ তৈরি করা হয়েছে বটতলাকে কেন্দ্র করে। এমনকী বটতলায় গ্রামবাসীরা যে ভাবে মানত করতেন তা-ও বোঝানো হয়েছে কৃত্রিম বটগাছের নীচে একটি বেদি এবং তার উপরে সুতোয় বাঁধা ঢিলের সাহায্যে।
নোনা জোড়া কলতলায় হচ্ছে অকালবোধন। সংগঠকেরা মণ্ডপ তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সির অনুকরণে। উদ্যোক্তাদের দাবি, জেলায় তাঁরাই একমাত্র দেবীর অকালবোধন করেন। পদ্মের অভাব পূরণ করতে রাম কী ভাবে নিজের চক্ষু তুলে দুর্গাকে দান করতে চেয়েছিলেন, এ বারের পুজোয় আছে সেই দৃশ্য।
বাজারপাড়া সর্বজনীন-এর সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে নিখুঁত ভাবে। থামগুলি দেখে বোঝার উপায় নেই তা আসল না নকল। প্রতিমাও আকর্ষণীয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রতিবছর তাঁরা নতুন কিছু দর্শনার্থীদের দেওয়ার চেষ্টা করেন। উলুবেড়িয়ায় পুজোর সংখ্যা অনেক। তবে সেগুলি রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। অনেক মণ্ডপ বেশ আকর্ষণীয়। তবুও ও টি রোড ধরে দর্শনার্থীরা দলে দলে যখন কালীবাড়ি পর্যন্ত হাঁটেন এক লপ্তে একের পর এক প্রতিমা দর্শনে তা যেন মিছিলের আকার নেয়।
উলুবড়িয়া শহরের লাগোয়া রয়েছে শিল্পাঞ্চল। সম্প্রতি খুলেছে কানোরিয়া জুট মিল। পাশেই চেঙ্গাইলে চালু রয়েছে ল্যাডলো জুট মিল। এই সব এলাকায় হয়েছে একাধিক পুজো। আরও একটি শিল্পাঞ্চল বাউড়িয়ায় যুব গোষ্ঠী এবং গ্লস্টার জুট মিলের দুর্গাপুজো দেখতেও দলে দলে মানুষ ভিড় করেছেন। যদিও এখানে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টার কেবল কারখানা এবং বাউড়িয়া কটন মিলের মতো কারখানা, তবুও পুজোর কয়েকটা দিন এ সব ভুলে মানুষ মেতে উঠেছেন পুজোর দিনগুলিতে। |