গত বছর প্রথম বারের পুজোয় কোমর বেঁধে নেমেছিলেন এলাকার ৩৫টি পরিবারের মহিলারা।
এ বার তাঁরা পাশে পেয়েছেন বাড়ির পুরুষদের, এলাকার বিশিষ্ট জনদের।
আরামবাগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লিশ্রীর মহিলা পরিচালিত পুজোটি মহকুমার বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিতীয় বছরেই। ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই সেখানে উপচে পড়ছে ভিড়। শুধু তো পুজো নয়। একই সঙ্গে চলছে নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্মও। দরিদ্রনারায়ণ সেবা, দুঃস্থ পড়ুয়াদের বই দান, এলাকার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সচেতনতার প্রচার। |
প্রথম বছরটায় পুজোর আয়োজন করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল বিভা গঙ্গোপাধ্যায়, কল্পনা ঘোষ, প্রতিমা গণদের। তবু তাঁরা দমে যাননি। পাড়ার একটি পুজোর চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ হয়েই তাঁরা পুজোর সিদ্ধান্ত নেন। ওই পাড়ায় নানা কারণেই বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে সদ্ভাব ছিল না। সেটা ফিরিয়ে আনতেও তাঁরা মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন দুর্গাপুজোকেই।
পুজোর পরিচালিকা প্রতিমা গণ বলেন, “ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে আমরা মায়েরা নিজেদের নানা সমস্যা, পাড়ার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতাম। গত বছর পুজোর মাস কয়েক আগে ঠিক করি, কিছু একটা করতে হবে। তার পরেই পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই।”
তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত যে বাস্তবায়িত হবে, তা ভাবতে পারেননি ওই মহিলাদের স্বামীরা। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিভাদেবী, কল্পনাদেবীরা বলেন, “আমাদের তিল তিল করে জমানো টাকায় প্রতিমা এবং মণ্ডপের বায়না করার পরে বাড়ির পুরুষদের জানাই। তাঁরা আমাদের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমরা পেরেছি।”
পুজোর দ্বিতীয় বছরে শহরের বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওই মহিলাদের দিকে। মহিলাদের স্বামীরাও অতিরিক্ত তহবিল দিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম কুমকুম চক্রবর্তীর স্বামী শুভেন্দুবাবু বলেন, “আমরা গর্বিত। ৩৫টি আলাদা পরিবারকে একটি পূর্ণ পরিবারের রূপ দিয়েছেন আমাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া, তাঁদের সামাজিক কাজকর্মও আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে।” চিকিৎসক নিমাই কুণ্ডু বলেন, “এই প্রথম মনে হল টাকার অপচয় হচ্ছে না। সারা বছর বিভিন্ন সংগঠনের নানা উপলক্ষে টাকা দিতে হয়। ওই মহিলারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”
মহিলা পরিচালিত পল্লিশ্রীর এই পুজোয় প্রতিমা, আলো বা মণ্ডপসজ্জায় কোনও আড়ম্বর নেই। আচার মেনে পুজো ও সমাজকল্যাণমূলক কাজের আয়োজন করা হয়। পুজো নিয়ে তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেই প্রতিমাদেবী বলেন, “পুজো না মেটা পর্যন্ত আমাদের কারও ঘুম হয় না। কত যে কাজ, বলে বোঝাতে পারব না।” |