হাজার বাধা পেরোনো উৎসবের
শেষ পাতে অলিভ তেলের ভোগ

দেখতে দেখতে পুজো শেষ।
কলকাতা থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে রাজধানীর প্রবাসী বাঙালিরাও তাই শেষ মুহূর্তের আনন্দটুকু শুষে নিচ্ছেন। ঠিক একশো বছর আগে কলকাতা থেকে রাজধানী সরিয়ে আনা হয়েছিল দিল্লিতে। সেই সময়ে দিল্লিতে বাঙালি ছিলেন শ’খানেক। আর এখন প্রায় দশ লক্ষ।
ফি-বছর দুগ্গাপুজোয় কলকাতাকে দিল্লি কখনও টক্কর দেয় থিমে, কখনও জাঁকজমকে। কিন্তু এ বারে যেন একটু অন্য ছবি। মণ্ডপে-মণ্ডপে অনেকেই বলছেন, “এ বারে পুজোটা ঠিক জমল না! সবই আছে, তবু কী যেন নেই।”
প্রবাসী বাঙালিরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন পুজোর এই ক’টা দিনের জন্যই। তবুও এ বারের এই বিষণ্ণতা কি শুধুই পুজো শেষের জন্য, নাকি চেষ্টা করেও টানতে কোথাও ব্যর্থ হল প্রবাসের পুজো?
নিবেদিতা এনক্লেভ বঙ্গীয় পরিষদের সভাপতি বাবলু গোস্বামীর মতে, বাজারে যে মন্দা চলছে, তার ছাপ পড়েছে এ বারের পুজোতেও। স্পনসররা আগের মতো এগিয়ে আসছেন না। আর অন্য বারের তুলনায় কলকাতার শিল্পীদের খুব বেশি ভিড়ও এ বারে চোখে পড়েনি। তার কারণ, শিল্পীদের আনার জন্য যাঁরা উদ্যোগী হন, তাঁরা এ বারে অনেক বেশি দর হাঁকছেন। বরং সংগঠকদের মতে, শিল্পীরা নিজেরা যদি পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তা হলে হয়তো এই অনটনের বাজারেও পুজো কমিটিগুলি পছন্দের শিল্পীদের এনে বাঙালির মন ভরানোর সুযোগ পেতেন।
আসলে এই বছর সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়াটা পুজোয় এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মনে করছেন দিল্লির বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লী পুজো সমিতির সভাপতি উৎপল ঘোষ। এত দিন ধরে পুজোর যে মান তাঁরা বজায় রেখে আসছিলেন, এ বার তা ধরে রাখতে গিয়েই এক ধাপে বাজেট সাত লক্ষ টাকা বাড়াতে হয়েছে। আইনি জটে পুজো আটকে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় আদালতেও দৌড়তে হয়েছে। উপরন্তু, চিত্তরঞ্জন পার্ক বাঙালি পাড়া হলেও গত কয়েক বছর ধরে অবাঙালিরাও এখানে ভিড় করেছেন। সে কারণে পুজোর চরিত্র এখন বদলাতে হচ্ছে। তাই নিছক ‘বাঙালির পুজো’ না করে অবাঙালিদেরও সমান ভাবে সামিল করা হচ্ছে। তাঁদের পছন্দেরও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। উৎপল বলেন, “এ বারে বাঙালিদের পাশাপাশি অবাঙালিদের ঘরে-ঘরে গিয়েও আমরা প্রসাদ দিয়ে আসছি। তাঁদেরও মন জয় করার চেষ্টা করছি।”
কিন্তু সমস্যা যতই তার চরিত্র বদলাক, পুজোর ক’টা দিন একজোটে আনন্দে মেতে উঠতেই চেয়েছেন সকলে। পূর্ব দিল্লির এক পুজো সমিতির কর্ণধার প্রবাল বসু বললেন, “পুজোয় যদি অভিনবত্ব থাকে, সকলে মিলে এক ছাদের তলায় এসে আনন্দ করতে পারেন, তা হলেই পুজোর সার্থকতা। বাজেট কম-বেশি যা-ই হোক, আনন্দের উপাদান থাকা দরকার।”
আর এই অভিনবত্বের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে গ্রেটার কৈলাস ২-এর দুর্গোৎসব। গত তিন দিনে প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষ ভোগ খেলেন। আর সেই ভোগ যে-সে ভোগ নয়। কলকাতাকে অভিনবত্বে টক্কর দিয়ে সর্ষের তেল বর্জন করে অলিভ অয়েলে রান্না হচ্ছে খিচুড়ি, লাবড়া, বেগুনি, কড়াইশুঁটি দিয়ে তরকারি। সর্ষের তেলের থেকে দাম একটু বেশি হলেও রান্নায় অলিভ তেল কম লাগে। স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের ভয় নেই।
এই পুজোর সাধারণ সম্পাদক সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “বেগুনি রান্নার সময়ে একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু সেটি পাতে পড়ার পর কেউ টের পাননি, কী তেল দিয়ে রান্না হয়েছে। পরে সকলে জানতে পারলেন। তার পর এখন, বিশেষত মহিলারা পুজো প্রাঙ্গণ থেকেই অলিভ অয়েল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির কর্তাদের সেই তেলে রেঁধে খাওয়াবেন বলে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.