বাড়ির সামনে বড় কালী মন্দির থাকলেও পাড়ায় একটিও দুর্গাপুজো ছিল না। তাই ভীষণ মন খারাপ করত ওদের। ওরা বলতে দুবরাজপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা শ্মশানকালী মন্দির লাগোয়া দাসপাড়ার ১০-১৫টি ছেলে। বর্তমানে তাদের বয়স আট-দশ বছর হবে।
তিন বছর আগে যখন পুজো শুরু হয়, তখন প্রত্যেকের বয়স আরও কম ছিল। ওইটুকু ছেলেদের পুজো করার সাহস যোগাল কে? উদ্যোক্তাদের সম্পাদক পঞ্চম শ্রেণির পিন্টু দাস বলে, “ঠাকুর গড়া থেকে মণ্ডপ সাজানো, অর্থ সংগ্রহ থেকে পুজো সবটাই আমরা নিজেরাই করি। ভয় করব কেন?” একই রকম প্রত্যয় অন্য সদস্যদের গলায়ও। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাজেশ দাস, ষষ্ঠ শ্রেণির মৃত্যুঞ্জয় দাস বা সপ্তম শ্রেণির বাপ্পা দাসরা বলে, “এমনিতে এ সময় স্কুলে ছুটি থাকে। নিজেদের দুর্গাপুজোয় দারুণ আনন্দ হয়। অবশ্যই বাবা-মা আমাদের পিছনে থাকে।” |
কথায় ও কাজে তফাৎ নেই। তা ওদের মণ্ডপে গেলে টের পাওয়া যায়। মণ্ডপ বলতে মায়েদের শাড়ি দিয়ে অনেকটা সরস্বতী পুজোর আদলে গড়া মণ্ডপ। সামনে থার্মোকল দিয়ে কাজ করা। বাইরে থেকে তার টেনে দু’টি লাইট জ্বালানোর জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুর্গা প্রতিমাটি। প্রতিমাশিল্পী পিন্টু দাসের কথায়, “কিছু দিন এক জন প্রতিমাশিল্পীর কাজে সাহায্য করতাম। সেখান থেকেই প্রতিমা বানাতে শিখেছি।” দাসপাড়ার শ্রমজীবী পরিবারগুলির ছেলেদের আনন্দ দেখে অভিভাবকেরাও আনন্দ পান। অভিভাবক রাজেন্দ্র দাস, পূর্ণিমা দাস, রুবি দাসরা বলেন, “নিতান্তই কষ্ট করে সংসার চলে আমাদের। দুর্গাপুজোর কটা দিন বাচ্চারা খুব আনন্দে কাটায়। সেটা দেখে আমাদের মন ভরে ওঠে।”
তবে এই প্রথম ছোটদের দুর্গামণ্ডপের পাশে বড়রাও পুজো শুরু করেছে। বড়দের আয়োজনে ছোটরা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আনন্দে যে ঘাটতি হবে না সেটা স্পষ্ট জানায়, খুদে উদ্যোক্তারা। তাদের জবাব, “আনন্দ দ্বিগুণ হবে।” |