বাড়িতে শিবের পুজোর প্রচলন ছিল। তাতে অভিমান হয় মা দুর্গার। সেই অভিমান ভাঙতে প্রথম মাতৃআরাধনা শুরু হয় নানুরের জুবুটিয়ায় চক্রবর্তী পরিবারে। ওই পুজো বর্তমানে পাণ্ডা পরিবারের পুজো হিসেবে পরিচিত।
ওই পরিবারের ইতিহাস বলে, এক সময় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক। তাঁর আরোগ্যের জন্য বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করেন, রাজপরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা। দেওয়ান চক্রধর পৌঁছন জুবুটিয়ায়। চক্রধর সেখানে জপেশ্বর শিবের সন্ধ্যান পান। পান দৈবী ওষুধ। সেই ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন রাজা। পরে রাজা সন্তুষ্ট হয়ে চক্রধরকে জুবুটিয়া সংলগ্ন এলাকা দান করেন। সেই জমিতে জুবুটিয়ায় জপেশ্বর শিবের মন্দির নির্মাণ করেন। প্রচলিত আছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৮০০ বছর আগে ওই পরিবারের সাবেহরাম চক্রবর্তীকে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী দুর্গা। অভিমান, শুধু শিবের পুজো হবে তাঁর আরাধনা হবে না? পরের দিন জমিদারকে সেই কথা জানান। এবং জমিদার দুর্গাপুজো প্রচলনের ব্যবস্থা করে দেন। দান করেন দেবত্তোর জমি।
জুবুটিয়া আজ সেই জঙ্গলাকীর্ণ দুর্গম এলকা নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে আকর্ষণীয় শিবের মন্দির। বেড়েছে বসতির সংখ্যাও। ১২টি পাণ্ডা পরিবার রয়েছে। চালু হয়েছে আরও দু’টি পুজো। দিন বদলেছে। বদলায়নি পাণ্ডা পরিবারের পুজোর রীতি। আজও আকাশে উড়ে আসা শঙ্খচিল দেখার পরে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের বাজনা বাজে। মহাশক্তির আরাধনা স্বরূপ দেবীর মাথায় চাপানো হয় ফুল। পাণ্ডা পরিবারের বিশ্বাস, মায়ের আবির্ভাব হিসেবে আপনা থেকে ওই ফুল মায়ের পায়ে পড়ে যায়। সেই ফুল মাথায় ছোঁয়ালে সারাবছর সুখশান্তি বিরাজ করে ওই পরিবারে। ৮০ বছরের বিজয়কুমার চক্রবর্তী, ৮২ বছরের উমাশঙ্কর চক্রবর্তী, ৭০ বছরের গীতা চক্রবর্তীরা বলেন, “মায়ের ওই ফুলই আমাদের পরিবারকে সুখে-শান্তিতে রেখেছে।” একই বিশ্বাস বর্ধমানের কান্দার কার্তিক সুত্রধর, জুবুটিয়ার মানা দাস, আলিগ্রামের বাপি ঘোষদেরও।
পাণ্ডারা বর্তমানে ১২টি পরিবারে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পারিবারিক পুজো হিসেবে সকলে ভেদাভেদ ভুলে যান। জুবুটিয়ার জয়ন্ত চক্রবর্তী, ইতি চক্রবর্তীদের সঙ্গে সামিল হতে দুমকা থেকে শ্রীমন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে মাধবী চক্রবর্তীরা এসেছেন। |