নবমী নিশি শেষ। কিন্তু,দর্শকদের উছ্বাসে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। রামপুরহাট ও বোলপুরের মণ্ডপে মণ্ডপে তাই দর্শকদের ভিড়। উষ্ণায়ন কমানো থেকে পোস্ত চাষ না করার বার্তা দেখা গিয়েছে এখানকার মণ্ডপে।
ফাইভ স্টার ক্লাবের উদ্যোগে রামপুরহাটের পশ্চিম নিশ্চিন্তপুর সর্বজনীনের মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে বেলুড় মঠের আদলে। সাবেকি ডাক সাজের মূর্তি। গৈরিক সন্ন্যাসীর বসনের কাপড়ের রঙে মণ্ডপ। একই রঙের মণ্ডপ রয়েছে দশের পল্লী কামারপট্টিতে। ডাকের সাজের প্রতিমা। আবার বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে মণ্ডপও তৈরি হয়েছে কয়েকটি জায়গায়। নলহাটির মিলনী সঙ্ঘ ও মল্লারপুরের অগ্রণী সঙ্ঘের মণ্ডপ তাই অনেকের নজর কেড়েছে। থিমের পাশাপাশি অনাড়ম্বর ভাবে পুজো হচ্ছে নানা এলাকায়।
রামপুরহাট হাটতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির ভাবনায় সিংহবাহিনী দেবী। এখানে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। প্রতিমার পিছনে রয়েছে বিশালাকারের চালি। মাটির সুক্ষ্ম কারুকার্য রয়েছে তার উপরে।
জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাট হাইরোড দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপও অনেকের নজর কেড়েছে। সেখানে দুর্গাকে ঐশ্বর্যের প্রতীক রূপে আরাধনা করা হয়েছে। কাচের প্রবেশদ্বার থেকে ভিতর পর্যন্ত মার্বেল পাথর বসানো রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মণ্ডপ। এখানে হাতির পিঠে দেবী দুর্গার আবাহণ হয়েছে।
বুলেট ক্লাবের ভাবনায় মায়ের রুদ্র রূপ। অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য দেবী ওই রূপে এসেছেন। থিমের ভিড়ে কিছুটা আলাদা পূর্ব নিশ্চিন্তপুর পুজো কমিটির উদ্যোগ। উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, রামচন্দ্র নীলপদ্ম না পেয়ে নিজের চোখ দেবী দুর্গাকে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা তাই দৃষ্টিহীনের চোখে আলো দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মরনোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন কয়েক জন। পুজোর মধ্যে তাঁরা সেই অঙ্গীকারে অনুষ্ঠান করেছেন। একই উদ্যোগ নিয়েছে, দেশবন্ধু রোড সর্বজনীন। |
নলহাটির রয়্যাল ক্লাবের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র। |
রামপুরহাট নবীন ক্লাবের সদস্যেরা চাইছেন পৃথিবীর উষ্ণায়নের মাত্রা কমাতে। সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতে তাঁরা প্রতিমাকে রাজস্থানী বধূর বেশে উপস্থাপন করেছেন। মণ্ডপে মরুভূমির প্রতীকি রূপ তারা ফুটিয়ে তুলেছেন। চালধোয়ানি পাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের পুজো আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।
বুড়োশিবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি আলোকের ঝরনা ধারায় জাতীয়তাবাদকে তুলে এনেছে। এখানে আলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় খেলা, ফল, ফুল, পশু ইত্যাদি উপস্থাপন করেছে। তরুণের আহ্বানের মণ্ডপে দেবী দুর্গার সঙ্গে ব্রম্ভ্রা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর রয়েছে।
নলহাটিতে রয়্যাল ক্লাবের পুজো মণ্ডপে ঢুকলে দেখা যাবে খড়ের ছাউনির তিনটি কুটির। মাঝের কুটিরে রয়েছে দেবী প্রতিমা। দৃষ্টি নন্দনীয় প্রতিমায় শিল্পের ছোঁয়া রয়েছে। আদিবাসী পুরুষ-মহিলারা মাদল বাজাচ্ছে- এই দেওয়াল ছবি দেখা গিয়েছে এখানে। মুরারই থানার পাইকর স্বামীজি সঙ্ঘ বিবেকানন্দের সার্ধ শতবর্ষকে মাথায় রেখে মণ্ডপ সাজিয়েছে।
সবুজ রক্ষায় রবীন্দ্র ভাবনা উঠে এসেছে বোলপুরের লায়েকবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপে। রবীন্দ্রনাথের বৃক্ষ রোপন-সহ শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি প্রেম উঠে এসেছে এখানে। মণ্ডপের দৃশ্যপটে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন- গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী বৃক্ষ রোপন উৎসবে যোগ দিয়েছে। দেবী দুর্গা বনদেবী হিসেবে পূজিতা হচ্ছে। গণেশ, কার্তিক গাছ বসাচ্ছে। লক্ষ্মী গাছের চারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরস্বতী নাচের দল নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছে। অসুর গাছ কাটছে। বিশ্বকবি এক পাশে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বসে রয়েছেন।
পোস্ত চাষ না করার জন্য প্রশাসন দফায় দফায় সচেতন করছে। জামবনি দুর্গোৎসব তাঁদের মণ্ডপে সেই সচেতনতার প্রচার তুলে ধরেছে। টাইটানিক জাহাজের আদলে এখানে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। আলোও নজর কেড়েছে। আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে হিপালিনি দুর্গোৎসব পুজো করছেন। তাঁদের পুজো এ বারও নজর কেড়েছে। সংগ্রাম সঙ্ঘের মণ্ডপ বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে হয়েছে। ক্লাবের সদস্যেরা থার্মোকল ও মাটি দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছেন। গৌতম বুদ্ধের বাণী রয়েছে মণ্ডপজুড়ে।
আবার নষ্ট হয়ে যাওয়া কমপ্যাক্ট ডিস্ক দিয়ে কাছারিপট্টি যুব সম্প্রদায়ের মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। তাও দৃষ্টি নন্দনীয়। তুলো ও পাট দিয়ে বরফ ঢাকা পাহাড়-পর্বত সাজিয়েছে আদ্যাশক্তি সঙ্ঘ। মিশন কম্পাইন্ডের পুজোও পিছিয়ে নেই। ডাক সাজের প্রতিমা। মণ্ডপের বিভিন্ন জায়গায় বাবুই পাখির বাসা ও কলাগাছ রয়েছে। সাবেক পুজোর সঙ্গে থিম পুজোর জৌলুসে মেতে রয়েছেন বাসিন্দারা। সন্ধ্যা হলেই পথে নামছেন বাসিন্দারা। |