চোখ ধাঁধানো মণ্ডপ নেই। প্রতিমাও আড়ম্বরহীন। কিন্তু পূর্বস্থলীর বনপুকুর সর্বজনীনের পুজোয়। দেবীর আরাধনায় এখানে হাত মিলিয়েছে হিন্দু-মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।
পূর্বস্থলীর নাদনঘাটে বনপুকুর এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাস বহু দিনের। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। কয়েক জন তাঁত শ্রমিক রয়েছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই খেতমজুর। প্রতি বছর ফাল্গুনে গ্রামের মাঠে ফরিদ সাহেবের মেলা বসে। টানা দশ দিনের আসেন সকলেই।
তবে গ্রামে কোনও দুর্গা পুজো না থাকায় অনেক দিন ধরেই আক্ষেপ ছিল এলাকাবাসীর। প্রতি বছর তাঁদের ঠাকুর দেখতে যেতে হত প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোল্লারবিল এলাকায়। এ বার তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে দুর্গাপুজো হবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেই তো হল না। দুর্গাপুজোর আয়োজন এক পেল্লাই ব্যাপার। পুজোর বাজেট বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে যখন উদ্যোক্তারা চিন্তায় পড়েছেন, তখনই এগিয়ে আসেন এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন। ঠিক হয়, গ্রামের সকলে মিলে চাঁদা তুলে পুজো হবে।
গ্রামের মসজিদ থেকে প্রায় একশো ফুট দূরে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ঠাকুর বায়না, মণ্ডপ গড়া, পুরোহিতের সঙ্গে আলোচনা, সব হাতে হাত মিলিয়ে করেছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধন করেন পূর্বস্থলীর (দক্ষিণ) বিধায়ক স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “আমাকে এই পুজোয় আমন্ত্রণ জনিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা মৈনুদ্দিন শেখ। পুজো উপলক্ষে গ্রামের মানুষের এমন একাত্মতা সকলকে প্রেরণা জোগাবে।” মৈনুদ্দিন জানান, চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে পুজোর বহু কাজেই তিনি যুক্ত। গ্রামের যুবক খালেক শেখ, ইসমাইল শেখরা বলেন, “ঢাক বাজানো থেকে প্রসাদ বিলি, পুজোর সময়ে অনেক কাজ। তাই এই ক’দিন আমরা মণ্ডপ ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।”
গ্রামের বধূ মায়াবতী সরকারের কথায়, “গ্রামের পুজোয় এ বার বেশ আনন্দ হচ্ছে। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে এই পুজোয় যোগ দিয়েছে বলে খুশি আরও বেড়ে গিয়েছে। দেবীর কাছে আমাদের প্রার্থনা, এ ভাবে যেন সব বছর পুজো করতে পারি।”
মণ্ডপের কাছেই মসজিদ। সন্ধ্যায় আজানের আওয়াজের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে আরতির ঢাকের শব্দ। |