বছরভর দেবী পুজো পান ভবা পাগলার বাড়িতে
ন’টি ঘট। প্রত্যেকটি ঘটের মাথায় চাপানো হয় শুকনো নারকেল। নারকেলগুলির মধ্যে লাগানো হয় একটি করে লাল নিশান। নবমীতে ঘটগুলিকে সামনে রেখে দেবী দুর্গার উদ্দেশে জ্বালানো হয় হোমাগ্নি। কালনা শহরের জাপট এলাকায় ভবা পাগলার বাড়ির পুজোয় রয়েছে এমনই রেওয়াজ।
শহরের শেষ প্রান্তে জাপট এলাকা। সেখানে গেলে যে কেউই দেখিয়ে দেবে ভবা পাগলার বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধক কবির আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকায় আমতা গ্রামে। সেখানকার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারের সন্তান সাধন ভজনের জন্য চলে আসেন কালনায়। তৈরি করেন ভবানী মন্দির। এই মন্দিরে বসেই তিনি লিখেছিলেন প্রচুর কবিতা ও গান। পরবর্তী কালে তাঁর সেই গান বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি হয় তাঁর বহু গুণমুগ্ধ ভক্ত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কবিতা ও গানে সাধককবি করে গিয়েছেন লোকশিক্ষার কাজ।
নিজের বাড়িতে সারা বছর ধরে দশভুজার আরাধনা করতেন ভবা পাগলা। প্রায় পাঁচ দশক আগে তিনি কৃষ্ণনগরের শিল্পী মুক্তি পালের কাছ থেকে আনেন প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তি। পরিবারের এখনকার সদস্যেরা জানালেন, দেবীপক্ষের সূচনা হলেই সাধককবি শুরু করতেন নিরামিষ আহার। সারা বছর দশভুজার নিত্য পুজো চললেও দেবীপক্ষে পালন করা হত বেশ কিছু নিয়ম কানুন। দেবীকে তিনি নাকি দেখতেন বাড়ির মেয়ের মতো। ভোগের পাত্র হাতে নিয়ে বলতেন, ‘খেয়ে নে বেটি’। বছর চল্লিশ আগে এক বার ধুমধাম করে বাড়িতে দুর্গাপুজো করেছিলেন তিনি। সে বার দেশ বিদেশের বহু ভক্ত হাজির হয়েছিলেন পুজোয়।

নিজস্ব চিত্র।
সাধক কবির মৃত্যুর পরে দেবী দুর্গার নিত্য পুজোর কাজ তাঁর পরিবারের সদস্যেরা চালিয়ে নিয়ে গেলেও ঘটা করে বড় প্রতিমা এনে পুজো করার কথা সে ভাবে কেউ ভাবেননি। সাধক কবির নাতির স্ত্রী সোমা চৌধুরী বলেন, “স্বপ্নে দেখি, দেবী স্বমূর্তিতে হাজির হয়েছেন। তিনি নিজের পুজো চাইছেন। ঘটা করে পুজো মানে তো অনেক খরচ। বড় বড় চোখে তাকিয়ে দেবী তখন বলেন, ‘খইয়ের মুড়কি দিয়ে পুজো দিবি।’ এর পরেই তিনি অদৃশ্য!”
সেই শুরু। সোমাদেবীর স্বামী সঞ্জয়বাবু জানালেন, আমতার বাড়িতে বহু বছর ধরেই চলে আসছে দুর্গা পুজো। প্রথমে সেখানে খোঁজ নেন তাঁরা। এর পরে কুল পুরোহিত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। এই বাড়ির পুজোয় আলপনা দেওয়া হয় ভেষজ রঙে। ব্যবহার করা হয় গুঁড়ো হলুদ, গাছের সবুজ পাতার গুঁড়ো, ময়দা এবং কালো জিরে। ভোগে দেওয়া হয় মুড়কি, মুড়ির নাড়ু, নারকেল নাড়ু এবং তিলের নাড়ু। মন্দিরে দেবী দশভুজার সঙ্গে পুজো পান বাড়ির অন্য দেবদেবীরাও। মাটির তৈরি প্রতিমার নীচে থাকে সারা বছর পুজো পাওয়া প্লাস্টার অফ প্যারিসের প্রতিমা। অষ্টমীতে রয়েছে কুমারী পুজোর রেওয়াজ। বিজয়ায় পরিবারের তরফে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সাধক কবির ভবানী মন্দিরে রয়েছে তাঁর বহু সৃষ্টি। দেওয়ালে, পাঁচিলে লেখা তাঁর কবিতা, গান। পুজোয় হাজির হয়ে গিয়েছেন দেশ বিদেশের ভক্তরা। সবাই যেন পুজোয় খুঁজে চলেছেন সেই সাধক কবিকেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.