সন্ধিক্ষণে দেবীর কাছে শান্তিই চাইল গোশুম্বা
মা শান্তি দাও। বন্ধ দরজার ভিতর থেকে প্রার্থনা করলেন ওঁরা।
পুজোর ঠিক আগেই পর পর খুন, সংঘর্ষ। গ্রামছাড়া অনেকে।
এ বার গ্রামের পুজোয় নেই কোনও আড়ম্বর। ভয়ে মণ্ডপ তৈরি, আলোকসজ্জার কাজে আসেননি কেউ। তাই শুধু প্রতিমা এনে কোনও রকমে পুজো করছেন উদ্যোক্তারা। গ্রামের নাম গোশুম্বা। কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতের দফতর রয়েছে এই গ্রামে। বতর্মানে এই গ্রাম মঙ্গলকোট বিধানসভার অন্তর্গত। ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গোশুম্বা গ্রামে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন কংগ্রেস কর্মী নিমাই সাহা। এক মাস পরেও তাঁর দেহ মেলেনি। পুলিশের ধারণা, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার ‘পাল্টা’ হিসেবে ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে খুন হন সিপিএম কর্মী নারায়ণ দাস। এর পর থেকেই গ্রামের পরিস্থিতি থমথমে। দু’পক্ষের অনেক বাসিন্দাই গ্রামছাড়া। সম্প্রতি মহকুমাশাসকের উদ্যোগে একটি সর্বদলীয় বৈঠক করে জানানো হয়, পুজোর আগেই ঘরছাড়াদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এখনও কাউকেই ঘরে ফেরাতে পারেনি প্রশাসন।
গোশুম্বা গ্রামে ১৮টি পাড়ায় ৯০০ পরিবারের বাস। ২টি সর্বজনীন-সহ এখানে মোট ৮টি পুজো হয়। সন্ধ্যা হতেই মণ্ডপে ভিড় বাড়ত। আশপাশের গ্রাম থেকেও সকলে গোশুম্বায় পুজো দেখতে আসত। আত্মীয়দের সমাগমে পুজো বাড়িগুলি জমজমাট হয়ে থাকত। এ বার সব মণ্ডপ ফাঁকা।

নিজস্ব চিত্র।
এই গ্রামের ধর্মতলায় সর্বজনীন পুজোর জাঁকজমক বেশি। এ বার সপ্তমীর সকাল পর্যন্তও মণ্ডপ তৈরি হয়নি। এক দিকে পুজো হয়েছে, আর অন্য দিকে বাঁশের খুঁটিতে ত্রিপল টাঙিয়ে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যাক্তারা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা নারায়ণ প্রামাণিক, দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “বায়না নিয়েও কেউ মণ্ডপ তৈরি ও আলোকসজ্জার কাজে আসেননি। বাধ্য হয়েই আমরা কোনও রকমে কাজ চালানোর ব্যবস্থা করেছি। গত বছরও এখানে অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।”
এই গ্রামের বাসিন্দা সোমনাথ বিশ্বাস, হারাধন হাজরারা বলেন, “পুজো মণ্ডপ তো দূরে থাক, রাস্তায়ও লোকজনের যাতায়াত কম।” এই গ্রামের হাজরা বাড়িতেও পুজো হয়। ওই বাড়ির কর্তা বোধন হাজরা বলেন, “এ বার রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা খুব কম।” দত্ত বাড়ির প্রতিমা ‘ছোট মা’ বলে পরিচিত। মণ্ডপে বসে সাধন দত্ত বলেন, “এ বারে পুজোর আমেজই নেই। শুধ গোশুম্বাই নয়, আশপাশের আলমপুর, বরমপুর, গাঁফুলিয়ারও একই অবস্থা।”
পুজোয় হায়দরাবাদ থেকে গ্রামে ফিরেছেন সুকুমার দাস। তাঁর কথায়, “খুব মন খারাপ লাগছে। পুজোয় বাড়ি ফিরে কোথায় আনন্দ করব, তা নয় সারা দিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।” কলেজ ছাত্র শুভেন্দু দত্তের কথায়, “ভেবেছিলাম পুজোয় আড্ডা হবে, গল্প হবে। কিন্তু কিছুই হল না।” এই গ্রামের ব্যবসায়ী হারাধন পাল জানান, এ বছর বাজি বিক্রি নেই বললেই চলে।
গ্রামে ঢোকার মুখে পাল পাড়া। এই পাড়ায় কোনও পুজো হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকান্ত পাল, পাঁচুগোপাল পালরা বলেন, “আগে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঠাকুর দেখতাম। এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজতে না বাজতেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। পুলিশ না থাকলে দিনের বেলাতেও আর বেরোনো যেত না।” আর বধূদের কথায়, “সন্ধিক্ষণের সময় হাতজোড় করে দেবীর কাছে এই অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে প্রার্থনা করলাম। জানি না কী তাঁর ইচ্ছা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.