কোথাও ওড়িশার মন্দির, কোথাও ছোট্ট একটি গ্রাম।
বাদ নেই কিছুই। মহকুমার মেগা পুজোর তালিকায় প্রথম সারিতে বরাবরই থাকে খনি অঞ্চলের পুজোগুলি। ব্যতিক্রম হয়নি এ বারও। কোলিয়ারিতে কর্মরত শ্রমিকেরা এক দিনের বেতন জমিয়ে এই পুজোগুলি করেন। বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না।
চিনাকুড়ি ১-২ নম্বর কোলিয়ারির পুজোয় এ বারের থিম ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সার্ধশতবর্ষকে সামনে রেখেই এ বারের এই থিম বলে জানান পুজোর উদ্যোক্তা হলধর কর্মকার। মনোরম গ্রামের পরিবেশ।
কী রকম গ্রাম? না, কুমোরদের।
মাটির হাঁড়ি, কলসি, ভাঁড় সাজানো কুমোর পাড়া। সই গ্রামের হাট, বংশীবদনের গরুর গাড়ি। গ্রামীণ মানুষের চলাফেরা। পুজো মণ্ডপের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ। পাড় ঘেঁষে ফুটেছে অনেক কাশফুল। ফলে এখানকার প্রকৃতি আগে থেকেই কিছুটা সেজে রয়েছে।
তাই কবিগুরুর কবিতার এই থিম ফুটিয়ে তুলতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বলেই জানান উদ্যোক্তারা। এ বার তাঁদের বাজেট সাত লক্ষ ছাড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মণ্ডপে কবিগুরুর ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’ কবিতাটির চিত্ররুপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন কারিগরেরা।
চিনাকুড়ি ৩-৪ নম্বর কোলিয়ারির পুজোয় এ বারের অন্যতম বড় আকর্ষণ ওড়িশার একাধিক মন্দিরের সংমিশ্রণে তৈরি প্রায় ৩৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ। পুজো কমিটির সম্পাদক অসিতকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মূল জগন্নাথ মন্দির লিঙ্গরাজ ও সূর্য মন্দিরের আদলে বানানো হচ্ছে মণ্ডপটি। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গামছা ও মাদুর। উদোক্তারা জানান, শুধু মণ্ডপই নয়, চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকসজ্জাও রয়েছে এ বার। রয়েছে ‘লাইট এন্ড সাউন্ড’। পুজোর বাজেট সাত লক্ষ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মেগা পুজোর তালিকায় এ বারও জায়গা করে নিয়েছে ধেমোমেন কোলিয়ারির পুজো। প্রতি বছরের মতোই।
তবে এই পুজোর উদ্যোক্তারা কখনওই ‘থিম’ পুজোর পক্ষপাতী নন। এ বারও সেই ধারাই বজায় রয়েছে বলে জানালেন পুজো কমিটির সম্পাদক দেবাশিস বরাট। কাচের চুড়ি দিয়ে তৈরি কাল্পনিক মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সঙ্গে রয়েছে বিশেষ ধরনের আলোর ব্যবস্থাও। যা দর্শকদের চমকে দিয়েছে বলেই দাবি উদ্যোক্তাদের।
দেবাশিসবাবু জানান, কাচের চুড়ির মণ্ডপে বিশেষ ধরনের আলো ফেলে প্রতি মুহূতের্র্ মণ্ডপের রঙ বদল করা হচ্ছে। এই বাহারি মণ্ডপের সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের বিখ্যাত আলোকসজ্জা। পুজো মণ্ডপের সামনের মাঠেই সেই আলোর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট ধরা হয়েছে কমবেশি প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
কোলিয়ারির পুজো গুলির উদ্যোক্তারা জানান, প্রতি বছর পুজোর যাবতীয় উপকরণের দাম বাড়ছে। কিন্তু তাঁরা পুজোর বাজেট বাড়াতে পারছেন না। কারণ প্রতি বছরই শ্রমিক-কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। অথচ নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। তাঁদের বেতনের টাকায় এই পুজো হয়। বাইরে থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না।
এই অবস্থায় আর কত দিন তাঁরা মেগা পুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। |