দশটা দিন মাতে দশটি গ্রাম
হালয়ার পরদিন প্রতিপদে ঘট ভরেই শুরু হয় পুজো। মালদহের চাঁচলের প্রত্যন্ত এলাকা ডুমরো মিশ্র বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে তাই দশ দিন ধরে আনন্দে মেতে ওঠেন এলাকার দশটি গ্রামের বাসিন্দারা। সপ্তমী থেকে চার দিন ধরে জমজমাট মেলাও বসে। প্রতিষ্ঠার দিন থেকে শুরু করে ১৬০ বছরের পুরনো এই পুজো সমস্ত রীতি মেনে পুজো হয়। চাঁচলের একাধিক পুজোর মতো এই পুজোও রাজা, জমিদারের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ। চাঁচলের রানী দাক্ষায়ণী ইচ্ছেয় সন্ন্যাস জীবন ছেড়ে সংসার জীবনে আসার পর জমিদারি লাভ করে ওই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার গোলাকনাথ মিশ্র। কিন্তু সামন্ত যুগের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ বলে নয়, ওই পুজোর বিশেষত্ব অন্য কারণে। রাজা, জমিদার বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠিত বহু পুজোই কালক্রমে পুরোপুরি সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে। আবার বেশ কিছু পারিবারিক পুজোয় রয়েছে সর্বজনীনতার ছোঁয়া। কিন্তু ডুমরো এলাকার জমিদার গোলকনাথ মিশ্রের পুজো পারিবারিক হলেও প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন। জমিদার গোলকনাথ মিশ্র ওই পুজো শুরু করেন বাসিন্দাদের কথা ভেবেই। ক’বছর আগে পর্য়ন্তও ওই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিল না বললেই চলে। দেড় শতক আগে এলাকা ছিল দুর্গম। পুজোর সময় দূরে গিয়ে ঠাকুর দেখার সাধ স্বপ্নই থেকে যেত বাসিন্দাদের। জমিদারি শুরু করেই তাই পুজো শুরু করতে দেরি করেননি মিশ্র পরিবার। সংসার ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়েও পরে ফের গোলকনাথের প্রত্যাবর্তণের কাহিনীটাও বেশ চমকপ্রদ। যা না বললে পুজোর অতীত কাহিনীটাই অসম্পূর্ন থেকে যায়। মিশ্র পরিবার সূত্রেই জানা যায়, রানি দাক্ষায়ণীর অতি পরিচিত গোলকনাথ সন্ন্যাস নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। ২৫ বছর পর চাঁচলে ফিরে এক দিন রাজবাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে দেখে চিনতে পারেন রানি। তারই ইচ্ছায় লম্বা চুল দাড়ি কেটে ফেলা হয় গোলকনাথের। জমিদারী নিয়ে রানির ইচ্ছাতেই ডুমরো এলাকায় বসবাসের বন্দোবস্ত হয় গোলকনাথের। শুধু ডুমরো নয়, লাগোয়া এলাকার পুজো বলতে আজও মিশ্র বাড়ির পুজো। বাসিন্দারাও ওই পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন। ১০ দিন ধরে মেতে ওঠেন আনন্দে। স্থায়ী মন্দিরে পুজো হয় একচালায়। রয়েছে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন দিন ধরে বলি দেওয়া। মনস্কামনাপূরণের আশায় বলি দেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ৪ দিন ধরে মেলায় ভিড় করেন ১০টি গ্রামের বাসিন্দারা। খাওয়ানো হয় ৮-৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে। দশমীতে বিসর্জন দেওয়াই রীতি। বাসিন্দাদের পাশাপাশি মিশ্র পরিবারেরও যে যেখানেই থাকুন না কেন পুজোর সময় হাজির হন। ডুমরোয় মিশ্র পরিবারের প্রবীণ সদস্য জয়দেব মিশ্র বলেন, “পুজোর প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শুরু হওয়া সব আচার নিষ্ঠা রীতি আজও মেনে চলা হয়! পুজোর পুরোহিতের ক্ষেত্রেও বংশপরম্পরা মেনে চলা হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.