হৃদরোগ বাড়ছে মেয়েদের মধ্যেও
রাহনগরের বছর তিরিশের মহিলা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে এসেছিলেন শরীরে অস্বস্তি নিয়ে। বুকে ব্যথা নেই, মাথা ঘোরা নেই। তবু কোনও কাজ করতে পারছেন না। ইসিজিতে কিছু পাওয়া গেল না। চিকিৎসক অস্বস্তি কাটানোর কিছু ওষুধ দিলেন। লাভ হল না। মহিলা ফের গেলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। এ বার তাঁর অ্যাঞ্জিওগ্রাফি হল। দেখা গেল, মহিলার দু’টি প্রধান ধমনীর অনেকটা জুড়ে ‘ব্লক’!
শিবপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের এক মহিলার একটু বমি হয়েছিল আর ঘাম হচ্ছিল। মহিলা ভাবলেন, অনেক ক্ষণ খালি পেটে থেকে অম্বল হয়েছে। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে! কালনার বাসিন্দা ৫৫ বছরের এক মহিলার হঠাৎ ঘাড়ে ও হাতে খুব ব্যথা শুরু হল। তিনি ভাবলেন, স্পন্ডিলোসিস। হাড়ের ডাক্তারের কাছে গেলেন। পরীক্ষায় ধরা পড়ল, তাঁর হৃৎপিণ্ডের অবস্থা ভাল নয়।
একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, মেয়েদের হৃদয় পুরুষের তুলনায় শক্ত। অর্থাৎ মেয়েদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনায় কম। কিন্তু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হৃদরোগে আক্রান্ত মহিলার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কলকাতা শহরেই বেশ কিছু নামী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁদের কাছে মাসে গড়ে ৫ থেকে ১২ জন মহিলা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাচ্ছেন। তাঁদের অনেকের বয়স ৫০-এর নীচে। বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হৃদয় দিবসে’ কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আলোচনাচক্রগুলিতে হৃদরোগে আক্রান্ত মহিলাদের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে চিকিৎসকদের উদ্বেগ লক্ষ করা গিয়েছে। তাঁদের সকলেরই মনে হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার দরকার।
হৃদয়রক্ষায় শপথ। ‘বিশ্ব হৃদয় দিবসে’ সল্টলেকের একটি হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
কেন বাড়ছে মহিলা হৃদরোগীর সংখ্যা? চিকিৎসক সুনীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের সমাজে এখনও অনেক পরিবারে পুরুষ সদস্যদের শারীরিক অসুবিধা নিয়ে লোকে যতটা ভাবিত, মহিলা সদস্যদের ক্ষেত্রে ততটা নয়। তার উপর চরিত্রগত ভাবে মেয়েদের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বেশি বলে শরীরে অসুবিধা হলে প্রথম-প্রথম অনেকে সেটা চেপে যান। ফলে অনেক মহিলার হৃদরোগ সময় মতো নির্ণয়ই করা যায় না। আমাদের কাছে যখন আনা হয়, তখন বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে।” চিকিৎসক অরূপ দাস বিশ্বাসের মতে, “পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতিতে মেয়েরা বিভিন্ন পেশায় জড়িত হচ্ছেন। তাঁদের প্রচুর কাজের চাপ, অফিসের চাপ নিতে হচ্ছে। তার সঙ্গে বাড়তি রয়েছে সংসারের দায়িত্ব। বেশির ভাগ মহিলা বাড়ি ও অফিসের মাঝখানে পড়ে ছেলেদের থেকেও বেশি মানসিক চাপে ভুগছেন। তাঁদের হৃদরোগের সম্ভাবনা এমনিতেই বাড়ছে।” আর এক চিকিৎসক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা মেয়েরা বেশি অবহেলা করছেন বলে ধমনীতে ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাঁর কথায়, “স্বামী, ছেলেমেয়ে বা বাড়ির অন্যদের খাওয়াদাওয়ায় বেশি মন দিতে গিয়ে মহিলাটি নিজে হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তাই খেয়ে পেট ভরাচ্ছেন। হয়তো রান্না করতে গিয়ে সকালে তাঁর খাওয়াই হল না। তার পর অফিসে দৌড়ে গিয়ে একটা বোতল কোল্ড ড্রিঙ্ক আর বার্গার নিয়ে টেবিলে বসে পড়লেন। তাঁর ধমনীতেও নিঃশব্দে ফ্যাট জমা শুরু হল।”
মহিলাদের ভিতর ধূমপানের অভ্যাস বাড়াটাও হৃদরোগের একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন হৃদরোগের চিকিৎসকেরা। যেমন পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এখন ১০ জন মহিলার মধ্যে ৭ জনেরই ডিম্বাশয়ের মধ্যে একাধিক সিস্ট (ছোট টিউমার) থাকে। তার ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের প্রবণতা বাড়ে। রক্তে শর্করার পরিমাণও বাড়তে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের পথ তৈরি হয়। এই সব মহিলারা ধূমপানে আসক্ত থাকলে তাঁদের হৃদরোগের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। অর্থাৎ, যে কোনও মুহূর্তে তাঁদের হৃদয় বেঁকে বসতেই পারে।”
চিকিৎসক অঞ্জনলাল দত্ত মনে করছেন, পুরুষেরা যখন সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম থাকে, অর্থাৎ ৩৫-৪৫ বছর বয়সের মধ্যে তাঁদের হৃদরোগ বেশি হয়। ওই বয়সে মেয়েদের হার্ট অ্যাটাক তুলনায় কম। কারণ, ঋতুচক্র যত দিন অব্যাহত থাকে তত দিন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মেয়েদের হৃদরোগ কম হয়। মেনোপজের পর মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কিন্তু পুরুষদের সমানই হয়ে যায়।”
অর্থাৎ, নারীহৃদয় সাবধান!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.