‘অর্থাভাবে’ ওষুধ নেই আরজিকরে, কেমো পাচ্ছেন না দরিদ্রেরা
খি মালির ডান চোখটা এখন শুধুই একটা মাংসপিণ্ড! ফুলে বেগুনি হয়ে ক্রমাগত রস পড়ে। বর্ধমানের রায়নার বাসিন্দা, বারো বছরের লখির চোখে ক্যানসার হয়েছে। চোখ বাঁচাতে অনেক আশা নিয়ে গ্রাম থেকে সে এসেছিল কলকাতার ‘বড়’ হাসপাতাল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তার কেমোথেরাপি হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ভাঁড়ার শূন্য। কেমোর ওষুধ কেনার টাকা জোটাতে পারছেন না। কবে টাকা আসবে, কেউ জানে না। ফলে, গত আড়াই মাস ধরে আর জি করে কেমোথেরাপির কোনও ওষুধ নেই। তাই কেমোর অভাবে গরিব লখির ডান চোখের টিউমার বেড়ে মাংস খসতে শুরু করেছে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে মস্তিষ্কেও।
চন্দননগরের বাসিন্দা, ৬৫ বছরের নিখিল সাহার কোলনে ক্যানসার। আর জি করে ভর্তি তিনিও। দারিদ্রসীমার নীচে বলে নিখিলবাবুর কেমোথেরাপি নিখরচায় হওয়ার কথা। কিন্তু আড়াই মাস ধরে হাসপাতাল থেকে বিনা খরচে কোনও কেমোথেরাপি হচ্ছে না। বাইরে থেকে কেমোর ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই কপর্দকশূন্য, সহায়হীন বৃদ্ধের। কেমোতে দীর্ঘ ছেদ পড়ায় ক্যানসার হুহু করে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালের শয্যার সঙ্গে মিশে গিয়ে ধুঁকছেন নিখিলবাবু।
আর জি করে চিকিৎসাধীন লখি মালি। নিজস্ব চিত্র
একই অবস্থা পাশের শয্যায় শোয়া, ৭১ বছরের প্রবীরকুমার চক্রবর্তীর। ঘাড়ে ক্যানসার হয়েছে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা প্রবীরবাবুর। ছেলে অভিজিৎ বেকার। এক মাস আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের থেকে চেয়ে বাবার কেমোর জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা জোগাড় করেছেন। কিন্তু সাহায্য তো বার বার আসে না। অতএব দেড় মাস বিনা কেমোতেই হাসপাতালে পড়ে আছেন শান্তিপুরের বাসিন্দা প্রবীরবাবু। ঘাড় থেকে ক্যানসার ছড়িয়েছে গলায়।
আর জি করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন রোগীর কেমোথেরাপি হয়। এঁদের মধ্যে জনা কুড়িকে বহির্বিভাগ থেকে পাঠানো হয়। বাকি ১০ জন ইন্ডোর পেশেন্ট। অর্থাৎ, যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি, তাঁরা কেমো নেন। এঁদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই দারিদ্রসীমার নীচের, সরকারি নিয়মে যাঁদের নিখরচায় কেমো পাওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতাল কেমোর ওষুধ না-কেনায় হয় তাঁদের যে ভাবে হোক টাকা জোগাড় করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। যাঁরা পারছেন না, নিজেদের মৃত্যুর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। কেমোর এক-একটা সাইকেলের জন্য সাড়ে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা খরচ পড়ে, যা দরিদ্র রোগীদের পক্ষে কোনও ভাবেই জোটানো সম্ভব নয়।
তা হলে কি গরিবেরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন? সরকার বা স্বাস্থ্য দফতরের কি এ ক্ষেত্রে কোনও দায়িত্ব বর্তায় না? আর জি করের অধ্যক্ষ সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাঁর বক্তব্য, “অর্থভাণ্ডারের খুব করুণ দশা। গোছাতে সময় লাগবে। তত দিন কিছু করার নেই। টাকা না থাকলে কী করে ওষুধ কিনব? আপাতত যা টাকা আছে, তা দিয়ে জীবনদায়ী ওষুধ আগে কিনতে হবে।” কিন্তু, কেমো না-পেলে তো ক্যানসার-আক্রান্তও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন। সেই অর্থে কেমোও তো জীবনদায়ী। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, সরকারি তালিকায় কেমো জীবনদায়ী ওষুধের পর্যায়ে পড়ে না।
সুপার পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আর্থিক অবস্থার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এত দিন আমরা বড় ওষুধ সংস্থাগুলির বকেয়া টাকা আগে মিটিয়ে দিতাম। তাতে তারা তাৎক্ষণিক ভাবে ওষুধ সরবরাহের টাকা চাইত না। এই ভাবে ব্যাপারটা সামলে যেত। কিন্তু চলতি বছরের প্রথমে সরকার নির্দেশ জারি করে, ২০১১ সালের ৩১ মার্চের আগের কোনও বিল মেটানো হবে না। ফলে বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বাকি। তারা বলে দিয়েছে, বকেয়া না-মেটালে আর কেমোর ওষুধ দেবে না। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.