ভয়, দোকানে চড়াও হবে মাওবাদীরা। তাই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে রেশন ডিলার হতে চাইছেন না কেউ!
সমস্যার সুরাহা করতে রাজ্য সরকার অগত্যা নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই খাদ্য দফতর বার বার অনুরোধ করছে রেশনের ডিলারশিপ নিতে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বৃহস্পতিবার বলেন, “অযোধ্যা পাহাড়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে রেশন ডিলারশিপ দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দিয়েছেন। প্রথমে তারা রাজিও হয়েছিল। কিন্তু এখন বেঁকে বসেছে। আমরা তা-ও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
আতঙ্ক যে শুধু অযোধ্যা পাহাড়েই, তা নয়। খাদ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ ক’টা ব্লকেও রেশন ডিলারদের ভয় দেখিয়ে চাল-গম নিয়ে পালাচ্ছে মাওবাদীরা। তবে অযোধ্যা পাহাড়ে এটা বেশি প্রকট। বিক্ষিপ্ত হামলা তো আছেই, ২০০৮-এ ওই এলাকার বাঘমুন্ডিতে দশরথ মাঝি নামে এক রেশন ডিলারকে মাওবাদীরা খুনও করে। তার পর থেকে ওখানে কেউ রেশন ডিলার হতে রাজি হচ্ছেন না। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “দশরথ মাঝির স্ত্রীকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি রেশন দোকান রাখতে রাজি হননি। পুলিশি পাহারার আশ্বাসেও তাঁর সিদ্ধান্ত বদলায়নি। ওঁর ও পরিবারের আশঙ্কা, রেশন ডিলার হলে মাওবাদীরা মেরে ফেলবে।”
ফলে অযোধ্যা পাহাড়ে দীর্ঘ দিন কোনও রেশন ডিলার নেই। অথচ, ওই তল্লাটে তিন হাজারের বেশি আদিবাসীর বাস। সকলে বিপিএল তালিকাভুক্ত হলেও রেশন দোকানের অভাবে সরকারি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দু’টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছে খাদ্য দফতর। খাদ্যমন্ত্রী নিজেই তাদের রাজি করাতে সচেষ্ট হয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, জঙ্গলমহলের মাওবাদী-প্রভাবিত বিভিন্ন ব্লকে রেশন দোকানগুলো বেশ দূরে দূরে। অনেক সময় সাধারণ মানুষও দূরের দোকানে গিয়ে রেশন তুলতে ভয় পান। এই কারণে নির্দিষ্ট রেশন দোকান ছাড়াও পুরুলিয়ায় ১৭টি, বাঁকুড়ায় ১৫টি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৩টি অতিরিক্ত দোকান খুলেছে খাদ্য দফতর, যেখানে রেশন-সামগ্রীর পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যও থাকছে। পুজোর পরে জঙ্গলমহলে এমন আরও বারোটি বিপণি খোলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি এ-ও বলেন, “পরিস্থিতি বিচার করে জঙ্গলমহলের মাওবাদী-প্রভাবিত ২৩টি ব্লকে থানাতেই রেশন দোকান খোলা যায় কি না, সে ব্যাপারে দফতর ভাবনা-চিন্তা করছে। যাতে সব মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রয়োজনে থানারই একটা ঘরে রেশন দোকান খোলা হবে।”
কিন্তু তাতেও কি অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্যা মিটবে?
প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, পাহাড়ের উপরে থানা নেই। আর ওই অঞ্চলে মাওবাদীদের দাপটও যথেষ্ট। |