ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে উদ্বোধনের পালা। রাজ্য জুড়ে তাই বিদ্যুতের চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী।
অথচ প্রাক-পুজোর এই ভরা বাজারেই শুরু হয়ে গেল বিদ্যুৎ বিভ্রাট!
সাঁওতালডিহি-ডিপিএল-ফরাক্কায় তিনটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার, তৃতীয়ার সন্ধ্যায় সাড়ে তিনশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির কবলে পড়ল পশ্চিমবঙ্গ। আজ শুক্রবার, অর্থাৎ চতুর্থী থেকে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। তার মানে কি পুজোর দিনগুলোয় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হবে?
বিদ্যুৎ-কর্তারা অবশ্য ভরসা দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, আজকের দিনটা পেরোলে আগামী কাল অর্থাৎ পঞ্চমীর দিন থেকে রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না। কারণ, অফিস-কাছারি, কারখানা বন্ধ হতে শুরু করবে, ফলে চাহিদা কমবে। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিস্থিতি হঠাৎ এতটা খারাপ হলই বা কেন?
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর: বুধবার ফরাক্কায় এনটিপিসি-র নতুন যে পাঁচশো মেগাওয়াটের ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছিল, সেটা এ দিন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যে সম্পর্কে এনটিপিসি-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা: বাণিজ্যিক উৎপাদন আরম্ভ হয়েছিল পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে, পাকাপাকি ভাবে নয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সাঁওতালডিহি কেন্দ্রে আড়াইশো মেগাওয়াটের পাঁচ নম্বর ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বুধবার রাত থেকে বিকল। সেটা সোমবার রাত থেকেই বন্ধ ছিল। বুধবার রাতে ফের চালু করতে গিয়ে আবার বসে যায়। নিগমের অধিকর্তা (ও অ্যান্ড এম) রবীন্দ্রনাথ বসু জানান, ভেল মেরামতি শুরু করেছে। তাঁর দাবি, “ইউনিটটি অকেজো হলেও সমস্যা হবে না। কারণ, সাঁওতালডিহির ছ’নম্বর ইউনিটে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চলছে।” ডিপিএলের ১১০ মেগাওয়াটের ইউনিটটিও বুধবার বসে গিয়েছে টিউব ফুটো হয়ে গিয়ে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে সব মিলিয়ে ৮৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারাই বলছেন, গত ক’বছরের মধ্যে পুজোর মুখে এমন অবস্থা হয়নি। মূলত সন্ধের তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ-কর্তাদের দাবি: সিইএসসি-এলাকায় সরবরাহ যতটা সম্ভব অক্ষুণ্ণ রাখতে গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ ছাঁটাই হচ্ছে। অন্য রাজ্য থেকেও দিনে ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি।
বস্তুত রাজ্যে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের একাধিক ইউনিট বেশ ক’মাস ধরেই ক্ষমতার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কারণ, কয়লার সঙ্কট। অর্থাভাবে কয়লা সংস্থার বকেয়া মেটাতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। তাই প্রয়োজনীয় কয়লাও পাচ্ছে না। যার জেরে নিগমের গড় উৎপাদন ২৪০০ মেগাওয়াটে নেমে গেছে। কয়লা সমস্যায় জর্জরিত ডিপিএল-ও। এমনই তাদের অবস্থা যে, তিনশো মেগাওয়াটের বড় ইউনিটটি পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করলে ছোটগুলোকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে! ইউনিট বিভ্রাটের দোসর হয়ে কয়লার সঙ্কট যাতে পুজোর দিনগুলোয় বাড়তি বিপর্যয় ডেকে না-আনে, সে জন্য আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে নিগম। শনিবার থেকে ৩২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন নিশ্চিত করতে নগদ ৫০ কোটি টাকা দিয়ে আনানো হচ্ছে এক লক্ষ টন কয়লা। |