পদের গুরুত্বের কারণেই অনেক সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাতে হয় তাঁদের। অফিসে থাকতেও হয় বেশি ক্ষণ। এ বার তার ‘ইনাম’ মিলতে চলেছে। তা নিয়ে বেধেছে বিতর্কও।
কাজের প্রয়োজনে দফতরে বেশি সময় কাটানোর ‘পুরস্কার’ হিসেবে সচিব, উপসচিবদের বাড়তি টাকা দিতে চায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সংস্থার এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমতির জন্য বিষয়টি এ বার রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। পর্ষদের ৬০ বছরের ইতিহাসে কোনও কর্তাকে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার নজির কার্যত নেই।
আর বেনজির এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব ও উপসচিবেরা যদি বেতনের চেয়ে বাড়তি কোনও অর্থ না-নিয়েই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তা হলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বেলায় পৃথক নিয়ম হবে কেন?
এমনকী পর্ষদের ইসি-র অনেক সদস্যই অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এমন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। কিন্তু ইসি-র যে-বৈঠকে এই ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, সেটিতে বেশ কয়েক জন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বাদ দিয়েই বাড়তি অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।
ইসি-র সেই বৈঠকে কিছু সদস্যের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি পর্ষদের সভাপতি চৈতালি দত্তও অস্বীকার করেননি। তবে তিনি বলেন, “ইসি-তে কী নিয়ে আলোচনা হবে, সেটা বলা থাকে বৈঠকের ‘অ্যাজেন্ডা’ বা আলোচ্যসূচিতেই। এই বিষয়টিও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও যদি কেউ অনুপস্থিত থাকেন, সে-ক্ষেত্রে তো কিছু করার নেই।”
সচিব বা উপসচিবেরা অতিরিক্ত কত টাকা পাবেন?
সম্প্রতি ইসি-র বৈঠকে আলোচনা করে স্থির হয়েছে, দফতরে অনেকটা সময় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে সচিবকে অতিরিক্ত ১০ হাজার এবং দু’জন উপসচিবের প্রত্যিককে সাত হাজার টাকা দেওয়া হবে।
বাড়তি টাকা আসবে কী ভাবে?
পর্ষদের তহবিল থেকেই এই অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সচিব শান্তিপ্রসাদ সিংহ।
পর্ষদের এক প্রাক্তন সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, “এত দিন কি সচিব বা উপসচিবেরা বাড়তি সময় কাজ করেননি? এখন তাঁদের জন্য হঠাৎ অতিরিক্ত অর্থ কেন বরাদ্দ করা হচ্ছে, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।”
পর্ষদ-সভাপতির ব্যাখ্যা, “রাজ্যের অন্য শিক্ষা পর্ষদগুলির তুলনায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিব, উপসচিবদের অনেক বেশি কাজ করতে হয়। স্বীকৃতি হিসেবে তাই তাঁদের বেতনের অতিরিক্ত সামান্য কিছু অর্থ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।” অনুমোদনের জন্য বিষয়টি স্কুলশিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। চৈতালিদেবী বলেন, “এই বাড়তি খরচ তো পর্ষদের বাজেটে দেখাতে হবে। তাই এর জন্য সরকারের অনুমতি লাগবে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই ধরনের ভাবনাচিন্তার কারণ বুঝতে পারছেন না অন্যান্য বোর্ডের কর্তারাও। যেমন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাড়তি দায়িত্ব তো থাকেই। যাঁরা এই সব পদে আসেন, তাঁরা তো কাজের ধরন জেনেই দায়িত্ব নেন।” |