হার নিয়ে নীরব বুদ্ধদেবের মুখে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র কথা
সিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে বুধবার। গো-হারা হারতে হয়েছে সিপিএমকে। অথচ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বসিরহাট মহকুমারই মিনাখাঁয় জনসভা করতে এসে ওই পরাজয় নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা! বরং তাঁরা বললেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ কথা। বললেন, হাড়োয়ায় বামেরা ইতিমধ্যেই এই ‘পদক্ষেপ’ করেছে। এ বার তারা মিনাখাঁ-সহ রাজ্যের সর্বত্র ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ বদ্ধপরিকর। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মন্তব্য করলেন, চাষিকে জমি থেকে উচ্ছেদ হতে দেখলেই তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবেন। রাজ্যের পূর্বতন মন্ত্রিসভায় বুদ্ধবাবুর দুই প্রাক্তন সহকর্মী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এবং গৌতম দেবও একই কথা বললেন। রেজ্জাক আবার ‘স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি’তে এক ধাপ এগিয়ে বললেন, “লড়াই করব। হয় ওরা (তৃণমূল) কবরে যাবে। না হয় আমরা কবরে যাব।” ভিড়ে-ঠাসা মিনাখাঁ কলেজ-মাঠের সভায় এ দিন হাজির ছিলেন সুবিদ আলি গাজি। যিনি বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী এটিএম আবদুল্লার কাছে ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
বস্তুত, সিপিএম এখন দলের ‘কৃষক-দরদী’ এবং ‘গরিবের বন্ধু’ ‘ভাবমূর্তি’ তুলে ধরতে মরিয়া। কিছু দিন আগেই হাড়োয়াতেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় সিপিএমের ওই মরিয়া ভাব ফুটে উঠেছিল। বৃহস্পতিবার হাড়োয়ার অনতিদূরে মিনাখাঁর সভাতেও বুদ্ধবাবু বললেন, “কৃষকদের জন্য জমির লড়াই আমরাই করেছি।” তাঁর কথায়, “আর চুপ করে বসে থাকব না। ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। কোনও ভাবেই চাষিকে উচ্ছেদ হতে দেব না।” রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রী হিসাবে কিছু দিন আগে পর্যন্ত এ ধরনের কথাই শোনা যেত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে।
মিনাখাঁয় এক জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার। ছবি: নির্মল বসু
বুদ্ধবাবু এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে বিরোধী দলগুলি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসা বন্ধে ‘লাগাতার নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছিল। এ দিন বুদ্ধবাবুও সেই সুরেই কেশপুরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় জামশেদ আলি ভবনে আক্রমণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “তৃণমূল ইতিমধ্যে রাজ্যে আমাদের পাঁচ-ছ’শো পার্টি অফিস হয় দখল করেছে, না হলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সরকার কোনও কথাই শুনছে না। অথচ সরকার ইচ্ছে করলে এক দিনে এ সব বন্ধ করতে পারে।” মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করে বুদ্ধবাবু বলেন, “তৃণমূল এ সবের প্রতিবাদ করছে না। কিন্তু আমরা গরিবের কষ্ট দেখে বসে থাকতে পারব না। রাস্তায় নামব। উচ্ছেদ দেখলেই প্রতিবাদ করতে হবে।”
মাওবাদী প্রসঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত, বামফ্রন্টের জমানায় মাওবাদীরা ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত চার মাসে তৃণমূলই মাওবাদীদের ‘ফিরিয়ে এনেছে’।
বুদ্ধবাবুর কথায়, “মাওবাদীরা সর্বত্র বাড়ছে। জঙ্গল ছেড়ে শহরের দিকে আসছে। সরকার প্রতিবাদ না করে কেবল আপসের চেষ্টা করছে। এ ভাবে মাওবাদীদের রোখা যায় না।” পাহাড় নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানেরও সমালোচনা করেন তিনি।
বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর থেকে বুদ্ধবাবু ‘ভুল স্বীকারের’ কথা বলতেন। এ দিনও বুদ্ধবাবু বলেন, “কেন কিছু গরিব মানুষ আমাদের ছেড়ে গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কিছু ছেলেমেয়ের মনে হয়েছিল, সরকারটা পাল্টে দিই। কেন এমন হল, কী ভুল করেছি মানুষের কাছে গিয়ে এখন তা জানতে চাইছি।” তবে বাকি দুই নেতার মুখে ‘আত্মশুদ্ধি’ বা ‘ভুল সংশোধনের’ কোনও কথাই উঠে আসেনি। রেজ্জাক বলেন, “গরিব চাষি, বঞ্চিত মানুষের পার্টি বামফ্রন্ট। ওদের (তৃণমূল) মতো চোর-চিটিংবাজের দল নয়। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ালে বামফ্রন্টের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে না।” বাম জমানায় সুন্দরবন এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়ার পাশাপাশি গৌতমবাবুও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলকে তাঁর হুঁশিয়ারি, “ওরা জমি কেড়ে নিচ্ছে। লাল ঝান্ডা তুলতে দিচ্ছে না। এ সব ভাল শিক্ষা দিচ্ছে? মারামারি, কাটাকাটি করলে বেশি দিন থাকতে পারবে না।”
সিঙ্গুর প্রসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ে তৃণমূল শিবিরের উচ্ছ্বাসও ভাল চোখে দেখছেন না গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, “এক জন জজ সাহেবের রায়ই শেষ কথা নয়। দিল্লিতেও একটা আদালত আছে।” তবে হাইকোর্টের রায়ে বামফ্রন্টের জমি-নীতিই ‘স্বীকৃতি’ পেল বলে মনে করেন গৌতমবাবু। রাজ্যের প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রীর কথায়, “বুদ্ধবাবুরই নীতি ছিল জমি থাকবে সরকারের হাতে। তা ব্যবসায়ীদের হাতে ছাড়া যাবে না। কেউ ব্যবসা করতে না চাইলে জমি ফেরত দিতে হবে। মমতা চাইছেন, জমি ব্যবসায়ীদের হাতে সরাসরি তুলে দিতে। ফলে হাইকোর্টের রায়ে মমতা নয়, বুদ্ধবাবুর জয় হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.