নিত্যনতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়েই ব্যস্ত শিল্পী সুকুমার |
সীমান্ত মৈত্র • গোবরডাঙা |
চিরাচরিত মাটির প্রতিমা তো সবাই গড়েন। একটু অন্যরকম ভাবে যদি মাকে দেখতে হয় তাহলে কেমন হবে? এই ভাবনা থেকেই নেমে পড়লেন রোজকার জীবনে নানা প্রয়োজনে লাগা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মূর্তি তৈরিতে। শুরু করেছিলেন মাছের আঁশ দিয়ে। তার পরে থেকে একে হাতে উঠে এসেছে কখনও মোম, কখনও কাগজ, কখনও পাট, নারকেলের ছোবড়া ইত্যাদি। এ বার তাঁর হাতে উঠে এসেছে ডাল মশলা, শুকনো লঙ্কা, সরষের তেল আর জেজপাতা। না এ সব দিয়ে রান্না করতে বসেননি। বসেছেন দুর্গার মূর্তি গড়তে। |
|
বিভিন্ন রকমের মশলা দিয়ে তৈরি দুর্গা। --নিজস্ব চিত্র। |
উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার চণ্ডীতলার বাসিন্দা সুকুমার ভট্টাচার্য। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। এই পরিচয়ে অবশ্য এলাকায় গিয়ে হুট করে তাঁকে খুঁজে পাওয়া সমস্যা। বদলে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, যিনি ওই সব ননা রকম জিনিস দিয়ে ঠাকুর গড়েন তা হলে সমস্যা নেই। তাঁর বাড়ি চিনতে আর অসুবিধা হবে না। বছর ৬৫-র মানুষটির এক সময় শিক্ষক হিসাবে পরিচিত থাকলেও ঠাকুর তৈরির কল্যাণে তা বহু আগেই ঢাকা পড়েছে। পেশাদার মৃৎশিল্পী অবশ্য কোনওকালেই ছিলেন না। ছোটবেলায় মায়ের ইচ্ছায় রঙ, তুলি নিয়ে ছবি আঁকলেও ছবি আঁকা বা প্রতিমা তৈরির তালিমও পাননি কোনওদিন। দেশভাগের পরে সপরিবার ফরিদপুর থেকে চলে এসেছিলেন এ দেশে।
কিন্তু নানা ধরনের জিনিস দিয়ে ঠাকুর তৈরির ইচ্ছা কী কারণে?
“এমনিতে তো বাজার দোকানে যেতেই হত। একদিন ঘুরতে ঘুরতে মনে হল এ সব জিনিস দিয়ে যদি মূর্তি গড়া যায় তা হলে কেমন হয়! বলতে পারেন, শিল্পের ক্ষেত্রে কোনও কিছুই যে ফেলনা নয়, সেটা তুলে ধরার একটা চেষ্টা করছি মাত্র।” |
|
গোবরডাঙার একটি মণ্ডপের অন্দরসজ্জা। ছবি তুলেছেন পার্থসারথি নন্দী। |
ষাটের দশক থেকেই কাজ শুরু শিল্পীর। সাবুর দানা দিয়ে ৬৪’ সালে তৈরি করেন সরস্বতী। অনেকে প্রশংসা করেছিলেন। এর পরে ৭২’ সালে বসিরহাটের একটি পুজোর মণ্ডপে স্থান পেয়েছিল তাঁর তৈরি মাছের আঁশের দুর্গা। তার পর থেকে একে একে হাবরা, বারাসত, গোবরডাঙা নানা জায়গা থেকে এসেছে তাঁর তৈরি মূর্তির বায়না। এ বারও তাঁর তৈরি মশলার দুর্গা ঠাঁই পাবে স্থানীয় একটি পুজো কমিটির মণ্ডপে।
নিত্যনতুন জিনিস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেই ডুবে থাকতে চান সুকুমারবাবু। “সাধারণের কাছে চাহিদা নেই এমন বিষয় নিয়ে কাজ করাটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ।’’ কথা শেষ করে ফের কাজে ডুবে গেলেন শিল্পী। |
|