নদীর পাড়ে বাস ছিল। অধুনা বাংলাদেশের কোনও এক জায়গায়। সেখান থেকে কান্দিতে এসে জমিদারি পত্তন করার সঙ্গে সঙ্গে পুজোও শুরু করে পরিবার। পুজো শুরু করেছিলেন নরেন্দ্রনারায়ণ রায় দীক্ষিত। কিন্তু সেই পুজোতে তখন থেকেই ছিল তাঁদের পূর্বজদের সেই বাসস্থানের আবহাওয়া। দেবীর ভোগে তাই এখনও মাছের ঝোল ভাত দিতে হয়। প্রতিদিনই থাকে অন্ন ভোগ। জেমো ফুলবাড়ি এই পরিবারের সদস্যদের দাবি, কান্দিতেই তাঁদের পুজো চলছে তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে নিজস্ব কোনও পারিবারিক বিগ্রহ নেই। মন্দিরের সামনে আগে পুজোর সময় উৎসব শুরু হয়ে যেত। সেই সব দিন অবশ্য এখন স্মৃতি। মন্দিরটি অবশ্য রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
পুজোর সেই আড়ম্বর হারিয়ে গেলেও নিষ্ঠা এখনও সমানই রয়ে গিয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই পরিবারের রীতি অনুযায়ী তিন বার করে পুজো হয়। দশমীর দিন দু’বার পুজো হয়। ভোগের ক্ষেত্রে সকালে থাকে গাওয়া ঘি’র লুচি, তিন থেকে চার রকমের ফল। বাড়ির পাতা দই। সঙ্গে দু’টি নাড়ু। সপ্তমীর দুপুরে সুন্দরী আতপ চালের ভাত, ছ’রকম ভাজা, ঠাকুরের নিজের পুকুরের মাছের ঝোল। অম্বল ও গোবিন্দভোগ আতপচালের পায়েস। সপ্তমীর রাতে আবার লুচি ফল ও এক পোওয়া গরম দুধই দেবীর ভোগ। অষ্টমীর দিন সকাল ও রাতে সপ্তমীর মতোই ভোগ দেওয়া হয়। কিন্তু দুপুরে মাছের ঝোলের সঙ্গে থাকে ছানার বিশেষ সুনুরি বড়ার টক। নবমীর দুপুরে কিন্তু কামিনীভোগ আতপের পোলাও, পাঁঠার মাংসের ঝোল। কিন্তু সেই সঙ্গেই থাকে পুকুরের কাতলা বা রুই মাছের ঝোলও। দশমী কিন্তু পুরোটাই বাসি খাবার। সকালে আগের দিন রাতে পাতা টক দই ও খই। দুপুরে পান্তা ভাত, ছোলা-কলাই বাটা, কচুর শাক, টম্যাটোর চাটনি। ছ’রকম ভাজা, সেটাও বাসি হওয়া চাই। সঙ্গে আগের দিনই রাঁধা মাছের ঝোল। ভোগের এই এলাহী আয়োজন সামলাতে হয় চিত্রা, শিপ্রা ও শম্পা রায়কে। এ বার পুজোর দায়িত্ব দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের। তবে দেখভাল করছেন তাঁর ছেলে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ রায়। তিনি বলেন, “আগে কামিনীভোগ, সুন্দরী আতপ চাল মা’য়ের জমিতেই চাষ করা হত। এখন আর তা হয় না।” |