দোষারোপে সরগরম ইস্টবেঙ্গল
ট্রেভর মর্গ্যানের টিমের শরতের আকাশ দেখার আশায় যুবভারতীতে এসেছিলেন প্রায় হাজার ষাটেক দর্শক। কিন্তু ট্রফি বোধন তো হলই না, উল্টে ম্যাচের পর লাল-হলুদ আকাশে শুধুই কালো মেঘ। ম্যাচের পর সঙ্গে করে আনা জলের বোতল, কাগজের তৈরি মাছ, টোলগের ছবি-ওয়ালা প্ল্যাকার্ডের টুকরো টোলগে-গাওদের দিকেই ছুঁড়ে সমর্থকদের ক্ষোভ জানানোর কিছুক্ষণ পরেই দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপে সরগরম হয়ে উঠল ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুম।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কেউ কোনও প্রশ্ন করার আগেই ইস্টবেঙ্গল কোচ মর্গ্যান নিজে থেকেই বলে দিলেন, “আমরা কোনও বিভাগেই সালগাওকরকে টেক্কা দিতে পারিনি। যোগ্য দল হিসাবেই ওরা ট্রফি পেয়েছে। আমি নিজে সমর্থকদের মতোই হতাশ। কিন্তু এক একদিন এ রকম হয়।” তাঁর দিকে একের পর এক ধেয়ে এল নানা প্রশ্ন। কেন চোট পাওয়া মেহতাবকে নামাতে গেলেন? কেন গাওকে না বসিয়ে পেনকে বসালেন? নিজের গোলকিপারের খেলায় কি আপনি সন্তুষ্ট? আপনার ডিফেন্স কেন এত খারাপ খেলল? কেন চোট থাকা সত্ত্বেও রাজু গায়কোয়াড়কে স্টপারে নব্বই মিনিট রেখে দিলেন? আপনার মাঝমাঠ কেন এত খারাপ খেলল? কোনও প্রশ্নের উত্তর দিলেন, কোনওটা হেসে ওড়ালেন। কোনওটায় কাঁধ ঝাঁকিয়ে এড়িয়ে গেলেন। “মেহতাবকে খেলা শুরুর আগে জিজ্ঞাসা করেছিলাম খেলতে পারবে কি না? ও বলেছিল পারবে। তাই নামিয়েছিলাম। মেহতাব না থাকলে আমার প্ল্যান বি নেই। সে জন্যই ওকে নামিয়েছিলাম।” এরপরই হঠাৎ-ই গম্ভীর তিনি। “ফুটবলাররা কে খারাপ খেলেছে ড্রেসিংরুমে বলব। আপনাদের বলব না। সন্দীপ নন্দী গোলের জন্য দায়ী না রক্ষণের দোষে গোল হয়েছে সেটা তো টিম মিটিংয়ে বলব।” ব্রিটিশ কোচের নিজের ফুটবলারদের আড়াল করার চেষ্টার মধ্যেই আবার প্রশ্ন। মেহতাব না থাকলে আপনার প্ল্যান বি-কি? প্রচণ্ড রেগে গেলেন মর্গ্যান। “বলছি তো নেই। আমি তো খুঁজেই চলেছি। সুবোধকুমার আছে। কিন্তু জুনিয়র ছেলে। ওকে তৈরি করতে হবে।” কোচের অভিযোগ সম্পর্কে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেহতাব। তিনি নামতে চেয়েছিলেন, না কোচ তাঁকে জোর করে নামিয়েছেন জানতে চাওয়া হলে দরজা বন্ধ করে গাড়ি চালিয়ে দিলেন তিনি।
সন্দীপের চাপড়ে বল যাচ্ছে বিপক্ষের পায়ে। ছবি: উৎপল সরকার
মর্গ্যান ফুটবলারদের আড়াল করলেও দলের একাংশ অবশ্য ঘুরিয়ে কোচের বিরুদ্ধেই ব্যর্থতার জন্য আঙুল তুলতেন। তাঁকে বসিয়ে কেন টোলগেকে নামানো হল তা ম্যাচের পর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন পেন ওরজি-ই। ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর মন্তব্য, “যে সময় সবথেকে বেশি দরকার ছিল, সেই সময়ই আমাকে বসিয়ে দিলেন কোচ। মেহতাব মাঠে নেই। আমি উঠে যাওয়ার পর মাঝমাঠে বল ধরার লোকই তো ছিল না। বল বাড়াবে কে? উল্টে আমরাই গোল খেয়ে গেলাম।” বাইরে তখন অভিনব ক্ষোভ প্রকাশ চলছে লাল-হলুদ সমর্থকদের। সালগাওকরের সুয়েকা-চিডিরা টিম বাসে উঠলেন ইস্টবেঙ্গল জনতার গণ-হাততালির মধ্যে। ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার সন্দীপ নন্দী সেই দৃশ্য দেখছিলেন হতাশ মুখে। তাঁর বিরুদ্ধেই বাজে গোল খাওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছে কোচের সাংবাদিক সম্মেলনে। সন্দীপ অবশ্য গোল খাওয়ার অভিযোগ ওড়াতে গিয়ে বলে দিলেন, “মেহতাব বেরোবে কি বেরোবে না সেটা দেখতে গিয়েই প্রথম গোলটা খেয়ে গেলাম। পরের দু’টো গোলের ক্ষেত্রে আমার দোষ কোথায়?” প্রাক্তন ফুটবলাররা অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের হারের পিছনে মর্গ্যানের স্ট্র্যাটেজির ভুলই দেখছেন। গৌতম সরকার যেমন বলে দিলেন, “টোলগেকে শুরুতে না নামিয়ে গাও-কে নামানোটা বড় ভুল।” সাতের দশকের আর এক তারকা সুধীর কর্মকার আবার বললেন, “পেনের বদলে ওপারাকে বসালে বেশি ভাল হত। টিমটা গোলও পেত।”
হারের পর ইস্টবেঙ্গলে যখন চলছে চাপানউতোর। তখন করিম বেঞ্চারিফার দলের ড্রেসিংরুম বন্ধ করে চলছে উৎসব। দু’বছর আগে এক বিকেলে মোহনবাগান কোচের পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে শহর ছেড়েছিলেন। সেই শহর থেকেই দেশের সেরা ক্লাবের মর্যাদা নিয়ে যাওয়ার সময় করিম বলে গেলেন ৩-১ ফল হলেও ফল আসলে ৩-০। “আমার মতে ওটা পেনাল্টি ছিল না।” কোচ তেমন বিতর্কিত কিছু না বললেও এডে চিডি অবশ্য বললেন, “ফেডারেশন কাপ এতদিন কলকাতায় ছিল। এ বার গোয়াতেই থাকবে।” করিম আর চিডিদের এই সাফল্যে অবশ্য কোনও আফশোস নেই মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্রের। দু’জনকেই তাড়িয়েছে মোহনবাগান। অঞ্জন বললেন, “কলকাতার চাপ নিতে পারেনি বলেই ওদের সরতে হয়েছে। সবাই সেটা পারেও না। আফশোস থাকবে কেন?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.