|
|
|
|
আরামবাগ-তারকেশ্বর রোড |
২৯টি অবৈধ ‘হাম্প’ ভেঙে দিল প্রশাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
গত কয়েক বছরে যখনই যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, স্থানীয় লোকজন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাস্তায় ‘হাম্প’ বানিয়েছিলেন। এর ফলে, এক দিকে যেমন রাস্তার ক্ষতি হচ্ছিল, তেমনই ভাঙছিল যানবাহনের যন্ত্রাংশ। তাই বুধবার সারাদিন ধরে আরামবাগ শহর থেকে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গা পর্যন্ত আরামবাগ-তারকেশ্বর রোডের ২০ কিলোমিটার জুড়ে অবৈধ ভাবে গজিয়ে ওঠা ২৯টি হাম্প ভেঙে দেওয়া হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর নেতৃত্বে ওই কাজ করে মহকুমা পূর্ত দফতর। ওই দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সলিল দাস বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির অবস্থা এমনিতেই সঙ্গিন। তার উপরে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে হাম্প নির্মাণের ফলে রাস্তাটি ক্রমশ যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে উঠেছিল। অবশেষে রাস্তাটি হাম্পমুক্ত করা হল।” মহকুমাশাসক বলেন, “এর পরে আর যেখানে-সেখানে হাম্প নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।”
আরামবাগ থেকে তারকেশ্বর এই ৩০ কিলোমিটার পৌঁছতে মোট ৩২টি হাম্প পেরোতে হয় যানবাহনকে। তার মধ্যে চাঁপাডাঙা পর্যন্ত ছিল ২৯টি হাম্প। ওই হাম্পগুলির দূরত্ব কোথাও ছিল হাফ কিলোমিটার, কোথাও বা এক কিলোমিটার। কয়েক জায়গায় আবার দু’টি হাম্প ছিল ১০০ মিটারের মধ্যে। যা নিয়মবিরুদ্ধ এবং অবৈধ বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর। মাস দুয়েক আগে সব অবৈধ হাম্প ভেঙে দেওয়ার দাবিতে মহকুমার তিনটি বাসমালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসক, জেলাশাসক এবং জেলা পূর্ত দফতরের কাছে আবেদন করা হয়। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
প্রসঙ্গত, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। এ বারে বর্ষায় তার চেহারা আরও করুণ হয়েছে। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, বেহাল রাস্তার অন্যতম কারণ ওই অবৈধ হাম্প নির্মাণ। তা ছাড়া, রাস্তাটির ধারের নয়ানজুলি ছাই বা মাটি ফেলে অবৈধ ভাবে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষার জল বেরোতে পারে না। রাস্তা ভঙ্গুর হয়। দিনরাত অতিরিক্ত পণ্য এবং বালি বোঝাই লরি চলাচল করে। সলিলবাবু বলেন, “আমূল সংস্কার করা না হলে রাস্তাটি টিকবে না। প্রতিদিন ১৬ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করে ওই রাস্তায়।”
মহকুমা পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তাটি ২০০০ সালে শেষ বার সংস্কার করা হয়। তার পর থেকে শুধুই বিক্ষিপ্ত ভাবে ভাঙা অংশগুলি জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালে রাস্তাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে জেলা পূর্ত দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা মেলেনি। শুধু রাস্তা তদারকি খাতে বরাতটুকু দেওয়া হয়। সম্প্রতি রাস্তাটিকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে ৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়। পাওয়া গিয়েছে ৪৩ লক্ষ টাকা। সাধারণ মানুষের অবশ্য অভিযোগ, নিম্ন মানের মালপত্র দিয়ে তৈরি হওয়ার ফলেই ক্রমশ রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ছে।
হাম্পগুলি ভেঙে দেওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে ক্ষোভ রয়েছে। যেমন, আরামবাগের পারুলের রমজান আলি, গড়বাড়ির গোপাল রায়, কাবলের সনাতন মালিক, পুড়শুড়ার সাঁওতার বিকাল ভট্টাচার্য প্রমুখের অভিযোগ, প্রশাসন এবং পুলিশ গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গাড়িগুলির বেপরোয়া গতিতে রেষারেষির দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রুখতেই এলাকার মানুষ হাম্প তৈরি করেছেন।
কিন্তু এ ভাবে হাম্প তৈরি করা যায় না বলে জানিয়েছেন সলিলবাবু। তিনি বলেন, “গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যে হাম্প বানাই, তার উচ্চতা কম হয়। পর পর তিনটি হাম্প তৈরি করা হয়। কিন্তু এখানে যে হাম্পগুলি বানানো হয়েছিল, তার কোনও নির্দিষ্ট উচ্চতা ছিল না। ফলে, গাড়িগুলিকে বেশি ব্রেক কষতে হচ্ছিল। রাস্তার ক্ষতি হচ্ছিল। একই ভাবে হাম্প থেকে নামার সময়ে রাস্তাটিকে অতিরিক্ত ভার বইতে হচ্ছিল। ফলে, রাস্তা ভাঙছিল।” মহকুমাশাসকের আশ্বাস, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এই রাস্তাাটি এক দিকে কলকাতা, অন্য দিকে, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু বাস মালিকদের দাবি, খারাপ রাস্তার জন্য ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ গাড়ি বসে গিয়েছে। মহকুমার ১৬/২০ বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক অমিয় পাইন বলেন, “শুধু হাম্পগুলির জন্যই আরামবাগ থেকে তারকেশ্বর পৌঁছতে ১৫-২০ মিনিট সময় বেশি লাগছিল। বাসের যন্ত্রাংশও ভাঙছিল। তা ছাড়া, হাম্পগুলিতে নির্দিষ্ট চিহ্ন না থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটছিল।” একই বক্তব্য, দূরপাল্লা বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক মির্জা গোলাম মোস্তাফা এবং মিনিবাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক দুলাল মণ্ডলেরও।
হাম্প নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় আপাতত তাঁরা হাঁফ ছাড়লেন। সকলেই জানাচ্ছেন, এ বার রাস্তাটি মেরামত করা হলে সব দিক থেকে সুবিধা হবে। হাম্প তুলে নেওয়ার পরে রাস্তা। |
|
|
|
|
|