লাইন সারানো হয়নি, দুর্ভোগের শিকার কয়েক হাজার যাত্রী
মালগাড়ির ট্যাঙ্কারে আগুন লাগার ঘটনার এক দিন পরেও আলুয়াবাড়ি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় রেল লাইন সারানোর কাজ না-হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়লেন হাজার হাজার ট্রেনযাত্রী। বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি, এনজেপি, কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে যাতায়াতকারী সব কটি ট্রেনই গড়ে ১২ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করেছে। আজ, শুক্রবার আলিপুরদুয়ার-নিউ জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসটি বাতিল করা হয়েছে।
এনজেপি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। বৃহস্পতিবার।
সব মিলিয়ে অন্তত ২৫ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেন দফায় দফায় আটকে যায়। কয়েকটি জায়গায় যাত্রীদের ব্যাপক হয়রানি হয়েছে। রাত নামতেই অন্ধকারের সুযোগে বিহারের বারসই লাগোয়া খুড়িয়াল এলাকায় দুষ্কৃতীরা ট্রেনে হামলা, লুঠপাটের চেষ্টা করে। জিআরপি যখন পৌঁছয়, তখন দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা অন্তত ১২টি স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান।
বুধবার দার্জিলিং মেলে করে কলকাতা ফিরছিলেন সাংসদ তাপস পাল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সামান্য এগিয়েই ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়। তার পর সারা রাত কার্যত একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, “এ দিন সকালে আমি কোনও মতে বাগডোগরা হয়ে কলকাতা ফিরেছি। কিন্তু আমার মালপত্র নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা ট্রেনেই রয়েছেন।” ওই দার্জিলিং মেল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিয়ালদহে পৌঁছয়। বহু যাত্রী দুর্ভোগের শিকার হন।
ট্রেন চলাচলে এই বিঘ্নের জন্য কাটিহার জেলার খুড়িয়াল স্টেশনের কাছে স্থানীয় যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল কিছু ক্ষণ বিঘ্নিত হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
বুধবারের ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার জেরে ট্রেন-বিভ্রাট।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত হাজং বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সারানোর কাজ জোরকদমে চলছে। পুরোপুরি ঠিক হতে শুক্রবার বিকেল গড়াতে পারে। ঘুরপথে ট্রেন চালাতে গিয়ে অস্বাভাবিক দেরি হচ্ছে। যাত্রীদের হয়রানি হচ্ছে।” কাটিহারের ডিআরএম ভূষণ পটেল জানান, ট্রেন চালানো পুরোপুরি বন্ধ না-করে ঘুরপথে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বুধবার সকালে আলুয়াবাড়ির কাছে বিহারের কিসানগঞ্জের বাঘমারায় মালগাড়ির ১৮টি ট্যাঙ্কারে আগুন লাগে। তীব্র উত্তাপে লাইন বেঁকে যায়। ফলে এনজেপি-কাটিহার সেকশনে সরাসরি ট্রেন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘুরপথে ঠাকুরগঞ্জ, নকশালবাড়ি একমুখী লাইন দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু হয়। তাতেই নানা এলাকায় ট্রেন থমকে যায়। যেমন বুধবার বিকেলে হাওড়া থেকে গুয়াহাটিগামী সরাঘাট এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন বরানগরের বাসিন্দা সৌরভ চক্রবর্তী। স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ট্রেনে ওঠার পরে ঘটনার কথা জানতে পারেন। সৌরভবাবু বলেন, “অন্ধকারের মধ্যে এসি বন্ধ করে দেওয়ায় দমবন্ধ করা অবস্থা। রেলের অফিসার-কর্মীদের কাছে বহুবার অনুরোধ করলেও সে ভাবে সাড়া মেলেনি।”
খোলা হাওয়া পেতে রোগীকে শোয়ানো হয়েছে স্টেশনের ওভারব্রিজে।
ভোগান্তি হয়েছে এনজেপি থেকে নয়াদিল্লি কিংবা কলকাতাগামী ট্রেনের যাত্রীদেরও। বুধবার রাত ১২টা নাগাদ এনজেপি থেকে লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস ছাড়ে। বৃহস্পতিবার রাত ৭টাতেও ওই ট্রেন শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের অধিকারী স্টেশনে আটকে থাকে। দার্জিলিং মেল নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় এনজেপি পৌঁছনোর কথা। রাত ১০টা পর্যন্ত পৌঁছয়নি। গড়ে ১২ ঘণ্টা দেরিতে চলছে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা, এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস। গুয়াহাটিগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস উমেদপুরে দাঁড়িয়ে পড়ে।
বস্তুত, যা পরিস্থিতি তাতে আজ, শুক্রবারের মধ্যে লাইন সারানো না-হলে পুজোর মরসুমে পর্যটকদের চরম দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা করছে ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “পর্যটনে ভূমিকম্প, ধসের প্রভাব আগেই পড়েছে। এবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না-হলে পুজোয় পর্যটকদের সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো মুশকিল হয়ে যাবে।”

ছবি তুলেছেন সন্দীপ পাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.