বয়সের ভারে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরার আনন্দ আর নেই। তবু পুজো নিয়ে উৎসাহে তাঁরা অনেকের থেকে এগিয়ে। গুলমোহর কেবিনে ৭ নম্বর টেবিল তখন ছয় বন্ধুর পুজোর আড্ডায় সরগরম। পুজোর আগে আড্ডা জমেছে দক্ষিণ-উত্তরের পুজোর লড়াই নিয়ে। বাদ যায়নি শহরতলিও।
উত্তরের দলের আলোচনায় সবচেয়ে আগে উঠে আসে ‘শোভাবাজার সর্বজনীন’-এর পুজোর কথা। সেখানে এ বারের ভাবনা পুতুলের মেলা। মণ্ডপে থাকছে পোড়া মাটি, আর্ট বোর্ড, সুতো, মাটির জালা দিয়ে তৈরি পুতুল। থাকছে কাগজের পুতুল। প্রতিমা পুতুলের আদলে। আর এক জন তুললেন ‘হরিতকী বাগান সর্বজনীন’-এর পুজোর কথা। সেখানকার থিমের কেন্দ্রে এ বার রবীন্দ্রনাথ। রবি ঠাকুরের নৃত্যনাট্যের বিভিন্ন নারীচরিত্র আছে ভাবনার কেন্দ্রে।
এত থিম ঠিক পছন্দ নয় সত্তরোর্ধ্ব সব বন্ধুদের। উত্তর কলকাতা মানে এখনও অনেকের কাছেই সাবেক পুজো, বললেন আর এক জন। তখনই উঠল ‘শ্যাম স্কোয়ার সর্বজনীন’-এর নাম। এখনও ডাকের সাজের প্রতিমার পুজো হয় সেখানে সাবেক মতে। উত্তর কলকাতার প্রবীণেরা এই পুজোকে পল্লিপুজো বলেই মানেন। বৈভবে নয়, আন্তরিকতাই দর্শনার্থীদের বছর বছর টেনে আনে এখানে। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানও এই পুজোর বৈশিষ্ট্য। ৬ বন্ধুর পুজোর আলোচনা থেকে বাদ পড়েনি পূর্বও। গত বার সেখানকার পুজো দেখে মুগ্ধ এক বৃদ্ধ বললেন লেকটাউনের ‘নতুনপল্লি প্রদীপ সঙ্ঘ’-এর কথা। সেখানে এ বারের ভাবনা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির উত্থান। মণ্ডপ সাজাতে পুরনো জিন্সের টুকরো ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানে। মাথার উপরে দেখা যাবে রামধনু।
এত সব আলোচনায় দক্ষিণের দল চুপ করে থাকে কী করে? তাঁদের দাবি, থিমপুজোকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ। সেই সঙ্গে আছে নানা বিষয়ে প্রচার। এ প্রসঙ্গে ওঠে সেলিমপুর রোডের ‘ঐকতান ক্লাব’-এর নাম। নদীর পাড় রক্ষার ভাবনাই উঠে আসছে তাদের পুজোর থিমে। ‘গোলমঠ দুর্গোৎসব পুজো সমিতি’র কথা তুললেন আর এক বন্ধু। সেখানে গোলাকৃতি মণ্ডপে দুর্গার আবির্ভাবের ২০০ তৈলচিত্র দেখার খুব ইচ্ছে তাঁর। মণ্ডপে থাকছে ছ’টি অসুর। কথায় কথায় উঠল ‘বেহালা ক্লাব’-এর নাম। তাদের থিম শাক্তপদাবলী। জাপানের কিরিগামি শিল্পে সাজবে মণ্ডপ। কাগজ কেটে ফুটিয়ে তোলা হবে শাক্তপদের বিভিন্ন ভাগে আগমনী, বিজয়া ও তৎকালীন বাঙালি সমাজচিত্র।
কারও বাড়ি থেকে ফোন আসায় কথা কিছুক্ষণ থমকায়। তবে দফায় দফায় চা-কফিতে তা গড়াবে বেশ কিছু দূর। |