মণ্ডপে লাহ্ শিল্প,
কাঠের পুতুল
স্কুল পেরিয়ে কলেজে ঢোকার পরে এটাই প্রথম পুজো টিকলির। রোজই কলেজের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় নানা পুজোর গল্প চলছে। একটা দিন সব্বাই একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোনোর কথা হচ্ছে। কিন্তু ফাঁড়া সামলাবে কে? বাবা-মায়ের কড়া শাসন। কোনও দিন একা বেরোয়নি টিকলি। কিন্তু কলেজে সে কথা বললেই তো পুরো ‘প্রেস্টিজ পাংচার’।
মন খারাপ নিয়েই কলেজ গেল সে। পাশে বসা সায়ন্তনীকে বলেই ফেলল সব। সমস্যার সমাধান করতে জুটে গেল মিতুল, দিশা, সুদর্শনা, সুমনারাও। ঠিক হল, এক দিন সায়ন্তনীর বাড়ি যাবে বলে বেরিয়ে বেড়াতে গেলেই হল। রাজি সব্বাই।
ক্লাসের পরে মিতুল বলল, ওদের বাড়ির কাছে ‘নস্করপাড়া পল্লি উন্নয়ন সমিতি’ লাহ্ শিল্পের মাধ্যমে মণ্ডপ সাজাচ্ছে। পাড়ার কাকুদের কাছে ও শুনেছে পলাশ গাছের কীট পরিশোধন করে তা দিয়ে শিল্প সামগ্রী তৈরি হয় ঝাড়খণ্ডে। ওই কুটির শিল্পেরই নাম হল লাহ্। মিতুলের কাছেই খোঁজ মিলল ‘লেক ভিউ পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজোর। বর্ধমানের কালনার শিল্পীরা সেখানে নারকেল মালা, তার গুঁড়ো, দড়ি, নারকেল গাছের কাঠি দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছেন। নারকেল কাঠ খোদাই করে বর্ধমানে পূজিতা এক দেবীর আদলে তৈরি হচ্ছে দুর্গাপ্রতিমা। বলল, থিমপুজোর পাশাপাশি সাবেক পুজো দেখতে চলে যাওয়াই যায় ‘সেনহাটি দুর্গোৎসব সমিতি’র মণ্ডপে। সন্ধ্যায় সেখানে গেলে দেখা যাবে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
সুদর্শনা খবর দিল, ওদের বাড়ির কাছে ‘বাঙুর অ্যাভিনিউ প্রতিরোধ বাহিনী’র মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পিতল, বেত ও চট দিয়ে। প্রতিমা সাবেক। বলল, এক ফাঁকে যাওয়া যায় মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের আদলে তৈরি ‘লস্করপুর জাগৃতি সঙ্ঘ’-এর মণ্ডপেও। বাবার কাছে সুদর্শনা শুনেছে ‘জাগরণ ক্লাব’-এর পুজোর কথা। বাঁশ, প্লাইউড দিয়ে তৈরি মণ্ডপের বাইরে চোখে পড়বে নানা ছবি, যার মূল বিষয় তাঁতি, চাষি, জেলে, কুমোরেরা। থাকবে সমাজের নানা অংশের ছবিও। আবার লেকটাউন যশোহর রোড মোড়ে ‘বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব’-এর মণ্ডপসজ্জায় থাকছে বর্ধমানের কাঠের পুতুল। প্রতিমাও ওই পুতুলের আদলেই।
বাড়ি ফিরে পড়তে বসার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে নতুন পাওয়া মোবাইলটা। সুমনার ফোন। বলল, ‘শোভাবাজার বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজো কিন্তু ছাড়া যাবে না। সুমনার মাসির বাড়ির একদম কাছেই এই পুজো। বলে রেখেছে, ঠাকুর দেখতে এসে বন্ধুরা মিলে ওখানে খাওয়াদাওয়াও করবে। ছত্তীশগঢ়ের সোনবাঈ রাজওয়ারের শিল্পকর্মের অনুসরণ দেখা যাবে এই মণ্ডপে। বিয়ের দশ বছর পরে সোনবাঈয়ের সন্তান জন্ম নেয়। মাঝের দশ বছর গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। সন্তান জন্মের পরে পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় নিয়ে, এক্কেবারে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে তার জন্য খেলনা তৈরি শুরু করেন সোনবাঈ। পরিচয় মেলে তাঁর শিল্পীসত্ত্বার। শোভাবাজারের এই পুজো কমিটি সোনবাঈয়ের তৈরি নানা শিল্পকর্মের অনুসরণে মাটি, বাঁশ, দড়ি দিয়ে মডেল তৈরি করে সাজিয়ে তুলেছে মণ্ডপ। এক ফাঁকে যেতে হবে বর্ধমানের কাঠের পুতুল, অসমের বাবুই দড়ি ও ত্রিপুরার চাটাই দিয়ে সাজানো ‘৭৬ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব’-এর মণ্ডপ দেখতেও। প্রতিমা একচালার, ডাকের সাজের। দেখতে হবে উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের মণ্ডল স্ট্রিট বারোয়ারির সাবেক পুজোও।
সুমনার ফোন রাখতে রাখতেই আবার সায়ন্তনীর ফোন। ‘চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন’-এর পুজোর কথা শুনেই ফোন করেছে। মণ্ডপটি দেখলেই মনে হবে যেন কোনও ফুলের বাগান। কাঠের তৈরি শিউলি, শালুক, পদ্মের দেখা মিলবে মণ্ডপের ভিতর ও বাইরে। ডালকাঁটাকে দেখা যাবে চন্দ্রমুখী ফুল হিসেবে। প্রতিমার পোশাক মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই। রাতে এলে চোখে পড়বে ডিজিটাল আলোর নানা কারুকার্যও।
এতগুলো পুজোর খবর পেলেও দুশ্চিন্তা কাটেনি টিকলির। বাবা-মার কাছে ধরা পড়ে যাবে না তো? লুকিয়ে বেরোনোর কথাটা কিছুতেই ভাল লাগছে না তার। খানিক পরে রাতে খেতে বসতেই বাবার হঠাৎ প্রশ্ন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে কবে বেরোনো হচ্ছে?’ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল টিকলি। কলেজের প্ল্যানের কথাটা বলেই ফেলল সাহস করে। মনে মনে ভাবল, আগে জানলে কলেজে গোল টেবিল বৈঠকটা না করলেও চলত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.