ঠিক কী রকম মণ্ডপ হলে চমকে দেওয়া যাবে গোটা কলকাতাকে? কোন সাজে দেবী আলো করে রাখবেন চারপাশ? থিমের সঙ্গেই মানানসই হবে প্রতিমা? নাকি সাবেক ডাকের সাজই লোক টানবে আরও? এমন কত প্রশ্ন যে ঘিরে রাখে শহর জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় পুজোর উদ্যোক্তাদের! বছরভরের সেই আকাশপাতাল ভাবনা যখন শেষমেশ রূপ পায় উৎসবের শহরে, দর্শনার্থীরা যে মুগ্ধ হবেন, তাতে সন্দেহ কী?
হরিদেবপুরের ‘বিবেকানন্দ অ্যাথলেটিক ক্লাব’ যেমন এ বার মণ্ডপ গড়ছে নয় কোণাকৃতি হিরের আদলে। তাদের ভাবনায় ‘রং তুলিতে, নব রূপে’ দুর্গার ন’টি রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাপড়ের উপরে। থাকছে মানানসই আলোকসজ্জা ও নেপথ্য সঙ্গীত।
হরিসভা স্ট্রিটের ‘২৫ পল্লি সবর্জনীন দুর্গোৎসবে’র থিমে বিহারের বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান। আলো, রঙে পুজো-পার্বণ, বিয়ে বা মেলা সবেরই শোভাযাত্রার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই পুজোয়। নেটের উপরে চুমকি ও উল দিয়ে বুনে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন নকশা ও মূর্তি। অর্ধবৃত্তাকার এই মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান সিংহবাহিনী রূপে।
বিধান শিশু উদ্যানে ‘ডাঃ বি সি রায় মেমোরিয়াল কমিটি’র মণ্ডপ সেজেছে আলোকচিত্রে। ৫০ বছর উপলক্ষে থাকছে সিপাহী বিদ্রোহ, গাঁধীজির জীবনের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং ভারতে তালিকাভূক্ত ইউনেসকো-র হেরিটেজ সাইটগুলির আলোকচিত্র। রাখা হবে গাঁধীজির ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিসপত্রও।
সরোজ সঙ্ঘ পরিচালিত বাঁশদ্রোণীর ‘সম্মিলিত সর্বজনীন দুর্গোৎসব’ চমকে দিতে চায় মাটি চাপা ইতিহাসের হাত ধরে। ‘সৃষ্টি আসে সময় খুঁড়ে’ থিমে তাঁদের মণ্ডপ একটি কাল্পনিক প্রত্নস্থল। মাটি খুঁড়ে পাওয়া এক প্রাচীন মন্দিরে থাকছে ধাতুর দেবীমূর্তির আদলে নির্মিত প্রতিমা। সিঁড়ি ভেঙে নাটমন্দির পেরিয়ে পৌঁছবেন গর্ভগৃহ ও সাজঘরে। প্রত্নস্থলে ঠিক যেমনটা হয়, সে ভাবেই এখানে দেখা যাবে কিছু কিছু স্থাপত্য মাটি খুঁড়ে বার করা হয়েছে। কিছু রয়ে গিয়েছে মাটির নীচে। মণ্ডপে থাকবে মাঙ্গলিক চিহ্ন, দেব-দেবীর মূর্তিও। প্রাচীন রাজদুর্গের আদলে মণ্ডপ গড়ছে ফরতাবাদ এলাকার ‘মিলনতীর্থ’ও। সেই রাজদুর্গেই হবে অসুরদমন।
নারীশক্তির জয়জয়কার দেব ব্যানার্জি রোডের ‘অমরাবতী দুর্গাপুজো কমিটি’র মণ্ডপে। থিম ‘অদ্বিতীয়া নারীর সাজে মা আসছেন মোদের মাঝে’। গ্রামীণ মণ্ডপ, একচালার প্রতিমায় আদিবাসী শিল্পের প্রভাব। মণ্ডপে ঢোকার আগেই দেখা যাবে মহিষাসুর বধ। আলোকসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে প্রদীপ, হ্যারিকেন, মাটির হাঁড়ি ও ঝাড়বাতি ইত্যাদি। আদিবাসী জীবনে নারী, ও ডোকরা শিল্পের আদলে তৈরি নানা মূর্তি-মডেলে সাজিয়ে তোলা হবে মণ্ডপ।
নতুন চমকের পাশাপাশি অবশ্য পুরনো ঐতিহ্যকে তুলে ধরাও আছে। ‘পটেলনগর সর্বজনীনে’ তাই কালীঘাটের পটচিত্রের শৈলীতে দেবীর অকাল বোধন।
তবে ঐতিহ্যই হোক বা খাঁটি নতুন ভাবনা চমক লাগিয়ে দিতে ভরসা তো মাত্র চারটে দিন। তার পর? ফের ‘থিম সমুদ্র’ মন্থনের পালা। এবং অপেক্ষা। ফের এই চারটে দিনের। |