|
|
|
|
|
পুজো শুরু করে মহিলারা
খুশি এনেছেন তাতারপুরে
মহেন্দ্র জেনা • বোলপুর |
|
দুর্গাপুজো এলে তাতারপুর কলোনির বাসিন্দাদের আর মন খারাপ করে না। গত তিন বছর ধরে তাঁদের গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে। এ বারও হবে। তাই খুশিতে ডগমগ এলাকার কচিকাঁচারা। খুশি বড়রাও। মহিলারাই এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা।
এ গ্রামে আগে দুর্গাপুজো হত না। পাঁচ কিলোমিটার দূরে বোলপুর শহরে পুজো দেখতে যেতেন কেউ কেউ। অনেকে পুজোর চারটে দিন ঘরে থাকতেন। পুজোয় যখন বহু দূরের মণ্ডপ থেকে মাইকের শব্দ ভেসে আসত তখন মন হু হু করত শোভা, কনকদের। তাঁরা এ গ্রামের বউ-মেয়ে। তাঁরাই এক সময় পুজো শুরু করার উদ্যোগ নেন। শোভা দেবনাথের মনে এসেছিল কথাটা। তিনি বললেন কনককে। কনক বলেছিল, “পুজো হলে খুব ভাল হয় বউদি।” কনকের কাছ থেকে পাড়ার মেয়ে-বউ বীণা, মুনমুন, মায়া, অলকা, সবিতা, শিল্পীরা খবর পেলেন। তাঁরাও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন।
কলোনির কালীমন্দির কমিটির কর্মকর্তা প্রভাত ওঝার কাছে তাঁরা জোট বেঁধে গিয়ে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানান। তিনিও রাজি হয়ে যান। এর পরেই কলোনির মহিলা মহল ঠিক করেন, পুজোর জন্য জোর করে চাঁদা নেওয়া হবে না। সাধ্যমতো, সবাই চাঁদা দেবেন। পশু বলিও হবে না। শোভাদেবী বলেন, “পুজোর সময় গোটা কলোনি সুনসান থাকত। ছোটদের তো বটেই আমাদেরও খুব মন খারাপ করত। তাই, সবাই যখন আমাদের পুজো করার ইচ্ছায় রাজি হয়ে গেলেন, তখন সত্যিই খুব ভাল লেগেছিল।”
২০০৮ সাল থেকে তাতারপুর কলোনিতে দুর্গাপুজো চলছে। গ্রামের মহিলাদের পুজো করার উদ্যোগ নিতে দেখে পিছিয়ে থাকেননি পুরুষরাও। তাঁরা পুজোর আগেই স্থায়ী দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করেছিলেন। সেই মণ্ডপেই দুর্গা প্রতিমার আরাধনা করা হয়। ২৫ হাজার টাকা প্রথম বছরে চাঁদা উঠেছিল। বছর বছর তা আরও বেড়েছে। তাতারপুর কলোনির পুজো দেখতে এখন আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন আসেন। পুজোর চারটে দিন ঢাকের শব্দে মেতে থাকে এক সময়কার সুনসান তাতারপুর কলোনি।
শোভাদেবীর স্বামী, বনকর্মী মহেন্দ্র দেবনাথ বলেন, “গ্রামে দুর্গাপুজো না হওয়ার জন্য আমাদের মনেও দুঃখ ছিল। পুজোর সময় এখন গোটা গ্রাম একটা পরিবার হয়ে যায়।”
পুজো এখন দ্বারগোড়ায়। তাই, মহিলা সদস্যেরা ব্যস্ত। পুজোর সমস্ত কাজ নিবিঘ্নে করার জন্য তাঁরা দফায় দফায় ‘মিটিং’ করছেন। কাজের তদারকিও চলছে। সেই ফাঁকে হাসি-মস্করা তো আছেই। পুজোর আগে এই হাসি-খুশি উড়ে যেত যে তাতারপুর কলোনি থেকে, এখন সেই গ্রামেই খুশির আমেজ ফিরে এসেছে। |
|
|
|
|
|