নাগরিক আমেরিকার। ডাক নাম বলিউড। এই নামেই ম্যাসাচুসেটসের একটি ব্যান্ডে ড্রাম বাজাত রেজওয়ান ফিরদৌস। সঙ্গীত চর্চার নাম করেই ফ্র্যামিংহ্যামে একটি গুদামঘর ভাড়া নিয়েছিল সে। তবে সঙ্গীতচর্চার জন্য নয়, ওই গুদামঘর থেকে রিমোট-চালিত খেলনা বিমান দিয়ে নাশকতা চালানোর ছক কষেছিল সে। নিশানায় ছিল পেন্টাগন ও ক্যাপিটল হিল। আপাতত তার ঠাঁই হয়েছে গোয়েন্দা হেফাজতে। নাশকতা ছাড়াও বিদেশি সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে মদত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। |
পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক ফিরদৌসের মতে, বিশ্ব জুড়ে ইসলাম-বিরোধী সন্ত্রাসের উৎস তার নিজের দেশ। আর এই সন্ত্রাসের মস্তিষ্ক হল পেন্টাগন। তাই পেন্টাগন ধ্বংস করতে গ্রেনেড, মেশিনগান আর বিস্ফোরক জোগাড় করেছিল সে। আক্রমণের জন্য ব্যাটারি-চালিত দূর-নিয়ন্ত্রিত খেলনা বিমান ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল তার। এই সব খেলনা বিমান ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। বিস্ফোরণের পর ছ’জন রাইফেলধারী কী ভাবে দু’টি দলে ভাগ হয়ে গুলিবর্ষণ করবে, কষা হয়ে গিয়েছিল তার বিস্তারিত ছকও। ভেস্তে গেল সবই। কারণ, সন্ত্রাস রোখার ভূত ঢুকে বসে ছিল ষড়যন্ত্রের সর্ষেয়! ‘আল-কায়দার’ যে সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেছিল সে, তাঁরা আসলে ছিলেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট) ও এফবিআইয়ের গোপন এজেন্ট! ফিরদৌসের পুরো পরিকল্পনার উপর গোড়া থেকেই নজর রাখছিলেন তাঁরা।
গোয়েন্দাদের দাবি, বিভিন্ন জেহাদি ওয়েবসাইট ঘেঁটেই আমেরিকা-বিরোধী মনোভাব গড়ে ওঠে ফিরদৌসের মধ্যে। ২০১০-এর গোড়া থেকেই সে ছকতে শুরু করে, কী ভাবে মার্কিন ক্ষমতার অন্যতম দুই কেন্দ্র পেন্টাগন ও ক্যাপিটল হিলে আঘাত করা যায়। গত ডিসেম্বরে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় ‘আল-কায়দার এক নিয়োগকারীর’, যিনি আসলে ছিলেন এফবিআইয়ের এজেন্ট। তার পর থেকে পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নিয়ে এফবিআই এজেন্টদের সঙ্গে বারবার কথা হয়েছে ফিরদৌসের। গত মে মাসে সে ওয়াশিংটনে আসে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর ছবি তুলতে। সে কাজেও তাকে সাহায্য করেন এফবিআই এজেন্টরা। তাঁদের মাধ্যমেই ফিরদৌসের হাতে আসে বিস্ফোরক। তবে ওই বিস্ফোরক থেকে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা বা জ্ঞান ফিরদৌসের ছিল না বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। ৯/১১-র পর থেকেই দেশে জঙ্গি হানা ঠেকাতে গোপন এজেন্টদের মাধ্যমে এই ধরনের ‘স্টিং’ অভিযান চালিয়ে আসছে এফবিআই। নাশকতার অনেক ছক তাতে ভেস্তেও দেওয়া গিয়েছে। নাশকতা ঘটাতে পারে, এমন লোকের সঙ্গে গোয়েন্দারাই জঙ্গি সেজে যোগাযোগ করেন। অংশ নেন পরিকল্পনাতেও। নির্দিষ্ট প্রমাণ হাতে আসার পরে আটক করা হয় সন্দেহভাজনদের। যা ঘটেছে ফিরদৌসের ক্ষেত্রেও। |