সম্পর্ক অটুট, বলছে আমেরিকা
সন্ত্রাস বন্ধে ‘চাপ’ বাড়িয়ে লাভ নেই, বার্তা গিলানির
ন্ত্রাস রুখতে পাক সরকার ও সেনা যথাসাধ্য লড়ছে। এর থেকে ‘বেশি’ তাদের থেকে প্রত্যাশা করা যাবে না। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সর্বদল বৈঠকে আমেরিকাকে এ ভাবেই জবাব দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।
তাঁর অভিযোগ, হক্কানি-সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের এত দিনের প্রয়াস ও সাফল্যকে কার্যত অগ্রাহ্য করেছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু ‘চাপ বাড়িয়ে’ পাকিস্তানের থেকে অতিরিক্ত কিছু পাওয়া যাবে না। মার্কিন মনোভাব যেমনই হোক, জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করে কোনও পদক্ষেপ করবে না পাকিস্তান। একই সঙ্গে আমেরিকাকে তাঁর প্রস্তাব, “সন্ত্রাস রুখতে আলোচনার সব রাস্তা খোলা রয়েছে।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিনই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘শীতলতা’ কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ দফতর এবং আফগানিস্তান-পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধির তরফে ‘বার্তা’ দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করা কিংবা সম্পর্কে ‘অবনতি’ মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতেও কী ভাবে দুই দেশ সন্ত্রাস দমনে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে ওবামা প্রশাসন। দু’দেশের মধ্যে মেধা বিনিময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘সুসম্পর্কের’ উদাহরণও দেওয়া হয়েছে।
তবে ওবামা প্রশাসনের তরফে এ কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, আইএসআই-এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। হক্কানির পাশাপাশি লস্কর-ই-তইবাকেও সাহায্য করা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করার নতুন অভিযোগ তোলা হয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থার বিরুদ্ধে। হক্কানিকে আর্থিক মদত দেওয়ার অভিযোগে তিন তালিবানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙতে পাকিস্তানের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সেনা অভিযান চালানোর দাবি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়ছে বলেও জানানো হয়েছে।
এই ‘কঠিন’ পরিস্থিতিতে গিলানির ‘নজিরবিহীন’ সর্বদল বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল, সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযোগ ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা খুঁটিয়ে দেখা। সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান যে ‘এককাট্টা’, বিশ্বকে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে বৈঠকে ছিলেন বিরোধী নওয়াজ শরিফ থেকে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পাক সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানি, আইএসআই প্রধান আহমেদ সুজা পাশা। বৈঠকের শুরুতেই গিলানি বলেন, “সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান প্রচুর আত্মত্যাগ করেছে, সাফল্যও অনেক। তার পরেও আমেরিকা আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ তোলায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, গিলানির সর্বদল বৈঠক ডাকার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পাক সরকারের উপর তৈরি হওয়া প্রবল চাপ কিছুটা কমানো। পাশাপাশি, জাতীয় স্বার্থে পাকিস্তান একজোট হয়ে লড়বে, আন্তর্জাতিক মহলকে এই বার্তাও দিতে চান গিলানি। বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজনৈতিক ভেদ ভুলে যখন এক মঞ্চে এসেছি, আমাদের তখন ভাবতে হবে, কী করে দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায়। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ দেখুক, তাঁদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা এক।” পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারও আইএসআই এবং পাক সেনার ভূয়সী প্রশংসা করে জানান, তাদের প্রতি সরকারের পূর্ণ আস্থা আছে।
তবে শেষ পর্যন্ত কতটা ‘ঐক্য’ দেখানো গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। কারণ পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, দেশে মার্কিন সেনা অভিযান বরদাস্ত করা হবে না বলে বৈঠকে জানান আইএসআই প্রধান। এ রকম অভিযান হলে পাক সেনা পাল্টা জবাব দেবে বলেও জানান সুজা পাশা।
সন্ত্রাস দমনের পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকে ভিন্নমতও মিলেছে। জামাত-এ-ইসলামির মতো ধর্মীয় সংগঠনের দাবি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিনদের সঙ্গে যৌথ ভাবে লড়াই করা বন্ধ হোক। বরং তালিবান এবং অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে কথা বলুক সরকার। নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগের দাবি, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মুত্তাহিদা কয়ামি মুভমেন্ট-এর বক্তব্য, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.